Description
গ্রামের নাম লিখিত ভাষায় ভরাকর, মৌখিক
ভাষায় ভরাকৈর। আড়াইশত বৎসর পূর্বে বসতিবিরল এই স্থানের পুকুর, খাল, ডােবা নাকি কৈ মাছে ভরা ছিল। নবাগত অধিবাসীগণ সেইজন্য ইহার ভরাকৈ নাম দিয়াছিলেন। ভরা কৈ উচ্চারণ সৌকর্যের জন্য হয়ত একটি ‘র’ আহরণ করিয়া হইয়াছে ভরাকৈর, মার্জিত রূপ ভরাকর। ইহা ছাড়া গ্রামের এরূপ নামকরণের অন্য কোন নির্ভরযােগ্য তথ্য পাওয়া যায় না। তবে শােনা যায় মৌলিক বংশের গঙ্গাপ্রসাদ মৌলিক মহাশয় পদ্মায় আক্রান্ত হাতারভােগ গ্রাম ত্যাগ করিয়া নূতন বাসস্থান নির্বাচনের জন্য নৌকায় চড়িয়া এই গ্রাম দেখিতে আসিয়াছিলেন । ফিরিবার সময় তিনি নৌকা ভরিয়া কৈ মাছ নিয়া গিয়াছিলেন।পরে এখানে বসতি স্থাপন করিয়া গ্রামের নাম দিয়াছিলেন ভরাকৈ।ভরাকরের সন্নিহিত দক্ষিণে একটি গ্রামের নাম সাওগাঁও। ইহা আকারে এত ক্ষুদ্র যে ইহাকে ভরাকরের অন্তর্গত একটি পাড়া বলিয়াই মনে করা যায়। তাছাড়া সামাজিক ক্রিয়াকর্মে, নানা অনুষ্ঠানে, খেলা-ধূলায় এবং আমােদ প্রমােদে এই দু’টি গ্রাম এক এবং অভিন্ন। সুতরাং এই পুস্তকে আমাদের গ্রাম বা ভরাকর বলিলে এই দু’টি গ্রামকেই
যুক্তভাবে বুঝিতে হইবে।ভরাকর বিক্রমপুরের অল্পাধিক এক সহস্র গ্রামের মধ্যে একটি
প্রসিদ্ধ গ্রাম, তবে অপেক্ষাকৃত আধুনিক। কারণ ১৭৮৯ খৃঃ রেনেল সাহেবের অঙ্কিত বিক্রমপুরের মানচিত্রে ভরাকর নামে কোন গ্রাম চিহ্নিত হয় নাই। সুতরাং ভরাকর গ্রামের উদ্ভব ও উন্নতি পরবর্তীকালের।আমাদের গ্রামে কোন প্রাচীন কীতির ধ্বংশাবশেষ, কোন প্রাচীন মূর্তি, মুদ্রা বা তাম্রশাসন আবিষ্কৃত হয় নাই। তবে পােদ্দার পাড়ার দক্ষিণে অশ্বথ বটে আচ্ছাদিত, জাফরি ইটের পাঁজর বাহির করা একটি মসজিদ ছিল। ইহা কোন কালের কেহ বলিতে পারে না।কৃষ্ণপ্রস্তরে খােদিত একটি বিষ্ণুমূর্তি ভরাকরের বাজারে অশ্বথবৃক্ষের তলে প্রতিষ্ঠিত হইয়া ভক্তজনের ফুলজলে অভিষিক্ত হইত। স্বৰ্গত যােগেন্দ্রচন্দ্র গুপ্ত রচিত বিক্রমপুরের ইতিহাস ১ম খণ্ডে ইহার আলােকচিত্র প্রকাশিত হইয়াছিল। টোকানী মৃধার পুত্র পূর্ণর পদ্মায়
ইলিশ মাছ ধরার জালে ইহা পাওয়া গিয়াছিল। মৌলিক বাড়ীর শ্ৰীকৃষ্ণপ্রসন্ন মৌলিক এক শুভ নববর্ষে পূজাঅর্চনা দ্বারা মূর্তিটি বাজারে প্রতিষ্ঠা করেন।ভরাকর ও সাওগাঁও বিক্রমপুরের দক্ষিণে পদ্মা নদীর উত্তর তীরে অবস্থিত। শীতের পদ্মার বিশাল নিস্তরঙ্গ জলরাশি, বর্ষার পদ্মার উন্মত্ত কুটীল জলপ্রবাহ রবীন্দ্রনাথ, নবীনচন্দ্র সেন প্রভৃতি বহু কবির কল্পনাকে উদ্দীপ্ত করিয়াছিল। স্যর জগদীশচন্দ্র বসু বাল্যকালে প্রতিদিন
সন্ধ্যায় এই পদ্মার তীরে বসিয়াই তাহার অমর রচনা ‘ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে’ লিখিবার প্রেরণা পাইয়াছিলেন। আমাদের গ্রাম এই পদ্মারই উত্তরে অনতিদূরে অবস্থিত।
Be the first to review “ভরাকরের ইতিহাস এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে ভরাকর ও সাওগাঁও -রচিত ও সম্পাদিত:শ্রীহৃষীকেশ মৌলিক”
You must be logged in to post a comment.