Description
বাগেরহাটের অন্যতম কৃতি সন্তান শ্রীমৎ স্বামী জ্ঞানাত্মানন্দজী বাগেরহাট শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ আশ্রম প্রতিষ্ঠার উৎসের মানুষ।।সুধীর মহারাজ বেলুড় মঠে ফিরে যান এবং ৺কামাক্ষা চরণের ব্যাকুল প্রার্থনা রামকৃষ্ণ মঠ-মিশন কর্তৃপক্ষের নিকট নিবেদন করেন। মঠ-মিশন কর্তৃপক্ষ তার এই নিবেদন সানন্দে গ্রহণ করে বাগেরহাটে একটি শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রম প্রতিষ্ঠার অনুমােদন করেন। এইরূপ অভাবনীয়রূপে বাগেরহাটের মাটিতে এই আশ্রম টির সূত্রপাত হয়।বেলুড় মঠের একটি শাখাকেন্দ্র বাগেরহাটে স্থাপিত হবে, এরূপ অনুমােদন লাভের পর এতদঞ্চলে আশ্রম স্থাপনের একটি উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করতে অধিক বিলম্ব হলাে না।বর্তমান স্থানটি বাগেরহাট বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের কতৃপক্ষের নিকট হতে (২.৫১ শতক) খরিদ করা হয়। সুধীর মহারাজ তাঁর পৈত্রিক সম্পত্তি হতে প্রাপ্ত যে অর্থ বেলুড়মঠে দান করেছিলেন তারই আংশিক অর্থে এই সম্পত্তি খরিদ করা সম্ভব হয়েছিল।সংগৃহিত জমিটি তখনও ধানের ক্ষেতরূপে ব্যাবহৃত হত ; সুতরাং জমিটর চারিপাশে মাটি কেটে এবং একটি পুকুর খনন করে স্থানটিকে উচু করা হয়। স্থানটি বাসােপযােগী হলে সেখানে একটি চালা ঘর নির্মিত হয়। কচুয়া নিবাসী ৺বীরেন্দ্রনাথ দত্ত ও স্থানীয় এ্যাডভােকেট রমেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী মহােদয় এ ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেন। ১৯২৬ সালের শেষ ভাগে বেলুড়মঠ কর্তৃক প্রেরিত সন্ন্যাসী স্বামী রামানন্দজী মহারাজ নব প্রতিষ্ঠিত আশ্রমের প্রথম অধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়ে আসেন। তাঁর আসার পরই পূর্ব নির্মিত চালাঘরে শ্রী শ্রী ঠাকুরের শুভ প্রতিষ্ঠা করে নিত্য সেবা পূজা আরম্ভ হয়।
স্বামী ক্ষেমানন্দজী (ইং-১৯৩৭-‘৪৬ সাল পর্যন্ত) এই আশ্রমের অধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়ে আসেন। স্বামীজী অত্যন্ত তীক্ষবুদ্ধিসম্পন্ন ও কর্মকুশল সাধু ছিলেন। স্বামীজীর প্রেরণায় ‘মানদা সুরন্দরী বসুরায় এবং রঁজনীময়ী নন্দী মহােদয়গণের উল্লেখযােগ্য দানকৃত অর্থে বর্তমান শ্রীশ্রীঠাকুর মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল। আশ্রমের পুরাতন দ্বিতল ভবনটি নির্মানও স্বামীজীর অন্যতম কীর্তি। স্বামীজীর কর্ম প্রচেষ্টায়,আশ্রমের আয়তন বৃদ্ধি এবং স্থায়ী আয়ের পথ প্রশস্ত হয়। তাঁর অনুপ্রেরণায় ৺সতীশচন্দ্র বসু, ৺নিবারণচন্দ্র সিংহ, ৺রাজেন্দ্রনাথ সিংহ, ৺যােগেশচন্দ্র সােম,
৺আশুতোষ চক্রবর্তী, যােগেন্দ্রনাথদত্ত, ৺রামলাল দত্ত প্রমুখ ভক্তগণ আশ্রম সংলগ্ন মােট ৯৭ শতক জমি আশ্রমে দান করেন। এতদ্ব্যতীত মােট ১:২৮ শতক (এক একর আঠাশ শতক)
জমি তাঁর চষ্টায় খেরিদ করা সম্ভব হয়। তাঁর কার্যকালে আশ্রমের আয়তন (আশ্রম কমপাউণ্ড)
বর্ধিত হয়ে ৩.৮২ (তিন একর বিরাশি) শতকে দাড়ায়। স্বামী ক্ষেমান্দজীর প্রচেষ্টায় বাগেরহাট
আশ্রমের প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছিল সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই ; আবার তারই এক বিরাট
ভুলের জন্য আশ্রমের আংশিক সম্পত্তি নষ্ঠ হতে চলেছিল। স্বামীজীর ভুলের সুযােগ নিয়ে রবীন
মিত্র নামক জনৈক ব্যাক্তি আশ্রমের সম্পত্তিতে স্বীয় সত্ত্ব দাবী করে বসেন ফলে আশ্রমের পরবর্তী অধ্যক্ষগণ মহামান্য ঢাকা Highcourt পর্যন্ত মামলা চালিয়ে ঐ সম্পত্তি উদ্ধার করেন।
স্বামী ক্ষেমানন্দজীর পর একে একে স্বামী ধ্রুবাত্মনন্দজী, স্বামী সাধনাননদজী, স্বামী
তিতিক্ষামানন্দজী এই আশ্রমের অধ্যক্ষরূপে আগমন করেন। স্বামী তিতিক্ষাননদজী সর্বপ্রকারে আশ্রমটিকে জনপ্রিয় করে তােলেন। তিনি সর্বপ্রথম সাপ্তাহিক পাঠচক্রের প্রবর্তন করেন। প্রতি শুক্রবার কোন না কোন ভক্ত গৃহে পাঠচক্রের আয়ােজন করা হত। শ্রীশ্রীঠাকুর, শ্রীশ্রীমা ও শ্রীমৎ স্বামী বিবেকানন্দজীর জীবনী গ্রন্থ এবং তৎসহ শাস্ত্র গ্রন্থাদি পাঠ ও ভক্তিমূলক সঙ্গীত পরিবেশন প্রভৃতি মুক্তপাঠে চক্রে অনুষ্ঠিত হতো।স্থানীয় প্রফুল্ল চন্দ্র মহাবিদ্যালয় এর তদানীন্তন ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক পরেশ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নিয়মিত পাঠক চক্রে যোগ দিয়ে শাস্ত্র গ্রন্থ পাঠ ও ধর্মালোচনা করতেন।
Be the first to review “অর্ঘ্য সুবর্ণজয়ন্তী স্মারকগ্রন্থ, শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ আশ্রম বাগেরহাট”
You must be logged in to post a comment.