Description
চার্লি যখন ভবঘুরে সাজটি গ্রহণ করেছিলেন তখন তাঁর মধ্যে বিশেষ কোন জীবন দর্শন ছিল না। সমস্ত বিষয়টি ছিল আকস্মিক এবং নাটকীয়।কিন্তু এই ভবঘুরের রঙ্গরস ও মশকরার মধ্যে ধীরে ধীরে জীবন সন্নিবেশিত হলো। পুঁজিবাদী একচেটিয়া অর্থনৈতিক সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে ঘুরে ঘুরে চার্লির ভবঘুরে তার অস্তিত্বের সন্ধান করতে শিখল। এক সময়
ছিল যখন ভবঘুরেকে সমাজ উদাসীনভাবে লক্ষ্য করেছে এবং ভবঘুরেও এই সামাজিক অবস্থানকে প্রশ্নবানে উচচকিত করেনি। কিন্তু ভবঘুরে এবং সমাজ চিরকাল এই ঔদাসীন্য ও নির্লিপ্ত রঙ্গরস নিয়ে নিস্পৃহ থাকেনি।
চ্যাপলিন বলেছেন :In tha new Film he (Vagabond) wll not so quite nice. I am sharpening the edge of his character so that people who have liked him Vaguely wil have to make up their minds.
সত্যই সে সময় এল। ভবঘুরে চ্যাপলিন ঔদাসীন্য ছেড়ে এবার তাকালেন সামাজিক সমস্যার দিকে। তখন মার্কিন দুনিয়ার অর্থনীতিতে ধনবাদের সজীব হস্ত প্রসারিত হয়েছে। ব্যক্তি পুঁজিবাদের আচরণগুলো স্পষ্ট হচ্ছে। আর ইউরোপীয় ফ্যাসীবাদের তীব্র ক্রোধ বিশ্বকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছে। এমন সর্বগ্রাসী অর্থনৈতিক ডামাডােলের মধ্যে ব্যক্তি তা সে সামান্য বা অসামান্য যেই হোক, তার পক্ষে নিরপেক্ষ থাকার
উপায় নেই।ব্যক্তির সত্তা ক্রমেই মুহ্যমান হচ্ছে, ব্যক্তির ইচ্ছাগুলো পুঁজিবাদের যন্ত্রদানবের চাকায় স্বকীয়তা হারাচ্ছে। এই আধুনিক ক্ষণের মধ্যে চার্লির ভাঁড় এবং ভবঘুরে ক্রমেই তার উদাসীন ব্যক্তিগত বেদনাকে বিলুপ্ত হতে
দেখল। এ যাবৎকাল যা সে নিরাসক্ত বেদনায় অথবা শিশুর দৃষ্টিতে দেখে ছিল, এবার তার সে বেদনাবােধ ও শিশুদৃষ্টি প্রসারিত হলো। ঘটনার
কারণ অনুসন্ধানের জন্য তার যুক্তিগুলো শানিত হতে চাইল। পার্কের ধারে ভালবাসার কাঙাল, সার্কাস দলের অসহায় ক্লাউন ইতোমধ্যে অনেক
পথ হেঁটেছে। তার অবহেলা, করুণা ও পরাভবের দুঃখগুলাে ক্রমে ক্রমে গ্লানিতে দগ্ধ হয়ে সিদ্ধ হয়েছে। চ্যাপলিনের ভবঘুরে প্রযুক্ত লােচন তুলে
তার চতুঃপাশ্বকে লক্ষ্য করতে প্রস্তুত হচ্ছে। মডার্ন টাইমসের ভেড়া আর শ্রমিক প্রবাহের মধ্যে এক সমভূমি রচিত হয়েছে। যন্ত্রদানব কেবল এক
হাস্যকর উপাদান নয়। এই দানবের পেটের মধ্যে অনন্ত লােভ ও শোষণ গোপন হয়ে আছে। এরই নাট বল্টু ঘােরাতে ঘোরাতে ভবঘুরে চালি
পাগল হয়ে উঠছে।এ ছবির মধ্যে প্রেম আছে। সেই রাজপথ, উদার আকাশ, স্বপ্নের নদীতীর সবই আছে। কিন্তু চার্লির স্বপ্নের সেই শিশু
সারল্যাট আর নেই। আর সেই চার্লি নেই।
সারল্যের অভাব দেখেই চ্যাপলিনের ছবি কয়েকটি দেশে নিষিদ্ধ হয়ে গেল। চ্যাপলিনের মধ্যে কমিউনিজমের গন্ধ আবিষ্কারের ষড়যন্ত্র
শুরু হলাে। যতদিন প্রশ্নহীন ছিল চার্লির ভবঘুরে, ততদিন সে মহাপুণ্যবান।যেই মাত্র পিলগ্রিম ছবিতে সামান্যতম আঘাতের তীর ছোঁড়া হল অমনি ধর্মব্যবসায়ীদের ঝনঝন প্রতিরোধ উচ্চারিত হলো।মডার্নস টাইমসে সেই প্রতিরোধ আরো শক্ত।লাল ঝাণ্ডা হাতে ভবঘুরে ছুটছে আর তার পিছনে ছুটছে পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার প্রহরীরা।
Be the first to review “চার্লি চ্যাপলিন ভাঁড় নয় ভবঘুরে নয়- মমতাজউদ্দীন আহমদ”
You must be logged in to post a comment.