চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লব সম্পর্কে সঠিক তথ্য নির্ভর বই খুব একটা বেশি নেই। আর বাংলা ভাষায় তাে প্রায় নেই বললেই চলে। সেদিক থেকে ডংপিং হানের এই বইটি একটি অত্যন্ত প্রয়ােজনীয় ভূমিকা পালন করেছে। লেখক বড় হয়েছেন সাংস্কৃতিক বিপ্লব সমকালীন চীনে, আর তাঁর সেই অভিজ্ঞতার উপরে দাঁড়িয়ে এই পুস্তকটি রচনা করেছেন মূলত সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে। তিনি নিজে তার গ্রামে গিয়ে সরাসরি কথা বলেছেন সেই সময়কার সাধারণ মানুষদের সঙ্গে, তৎকালীন কাগজপত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। আর এই সমস্ত সংগৃহীত তথ্যই এই বইটিতে তুলে ধরে তিনি বােঝাতে চেয়েছেন সাংস্কৃতিক বিপ্লব আসলে কী ছিল। বইটির বৈশিষ্ট্য হল, এখানে তথ্যগুলাে তুলে ধরা হয়েছে পক্ষপাতহীনভাবে, তার ফলে সেই তথ্যের আলােকে বস্তুটি যেমন,ঠিক তেমন ভাবেই ফুটে উঠেছে। আর এটাই তাে মার্কসবাদের একটা অন্যতম মূল বিষয় যে বস্তুটি ঠিক যেমন আছে, তেমন ভাবেই দেখা।চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লব সম্বন্ধে আজও কৌতুহলের শেষ নেই। বিতর্কও আছে অনেক। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের লক্ষ্য কী ছিল ? সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময়ে চীনে কী ঘটনা ঘটেছিল ? এই বিপ্লব চীনা সমাজে কী কী পরিবর্তন ঘটাতে শুরু করেছিল—এমন বহু প্রশ্ন আজও জনমনে বিদ্যমান। শুধু তাই নয়, এমন ধারণাও প্রচলিত আছে যে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় নাকি বহু সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে, এমন কি হত্যাও করা হয়েছে। সাংস্কৃতিক বিপ্লব চলাকালীন নাকি চীন হয়ে উঠেছিল বিশৃঙ্খলায় পূর্ণ একটি দেশ।বর্তমান গ্রন্থের লেখক সাংস্কৃতিক বিপ্লব চলাকালীন চীনেই জন্মেছেন এবং বড় হয়েছেন। এই বইটিতেও তিনি চীনের গ্রামাঞ্চলের মানুষদের সাংস্কৃতিক বিপ্লবকালীন অভিজ্ঞতাগুলি সরাসরি তুলে ধরেছেন, তুলে ধরেছেন তৎকালীন সরকারী তথ্যগুলিও। এর ফলে এই বইটিতে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের দিনগুলি যেমন জীবন্ত হয়ে উঠেছে, তেমনই পূর্বোক্ত বহু প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেছে বাস্তব ঘটনার বিবরণ থেকে। লেখক দেখিয়েছেন সাংস্কৃতিক বিপ্লব কীভাবে চীনের সাধারণ জনগণকে রাজনৈতিক ভাবে সক্রিয় করে তুলেছিল। শিক্ষাক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তন ঘটিয়ে দেশের অর্থনৈতিক বিকাশের দরজা খুলে দিয়েছিল। নতুন চীন গড়ে তােলার কাজে হাজার হাজার মানুষকে সামিল করতে পেরেছিল। লেখকের কলমেই উপলব্ধি করা যায় সাংস্কৃতিক বিপ্লব আসলে কাদের উপর আক্রমণ নামিয়ে এনেছিল, আর সেজন্য কারাই বা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের বিরুদ্ধে সােচ্চার।ইতিহাসের এগিয়ে চলার পথে শোষিত জনগণকে এমন আরাে অনেক সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে পরিশুদ্ধ হয়ে উঠতে হবে। তাই চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লব সম্বন্ধে স্পষ্ট উপলব্ধি থাকা জরুরী। সেই উপলব্ধিতে পৌঁছাতে এই গ্রন্থটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।গ্রন্থটির লেখক ডংপিং হান বর্তমানে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যালিফোর্নিয়াতে ওয়ারেন উইলসন কলেজে শিক্ষকতার কাজে যুক্ত।