Description
কলকাতার বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ভােরুকা পাবলিক ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ২০০০ সালে কলকাতার কলগার্লদের কাছে চিকিৎসার সুযােগ-সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটি প্রকল্পের সূচনা করে। ২০০৪ সালের মার্চ মাসে শেষ হয় প্রকল্পের কাজ। সব মিলিয়ে ১১৮৯ জন কলগার্ল, ৭১ জ এজেন্ট, ২০১ জন কলগার্ল যারা একাধারে এজেন্টের কাজও করে এবং ৫০ যৌন ক্লায়েন্টের সঙ্গে কথা বলার ভিত্তিতে দুটি প্রকাশনা বার করা হয় সংস্থাটির পক্ষ থেকে ২০০১ সালে ‘দ্য ইনভিজিবল ও ২০০৪ সালে ‘দ্য ইনভিজিবল টু: কনট্যাক্ট। ভােরুকার কাজটি এ জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে ইতিপূর্বে আর কোনও সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা এ বিষয়ে এত বিস্তারিত কাজ করেনি। ভােরুকা-র প্রথম প্রকাশনাটিতে (দ্য ইনভিজিবল) একটি দিশা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে এই গবেষণা কাদের নিয়ে। ভােরুকা-র সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘কলগার্লস আর নন-ব্রথেল বেসড মােবাইল কমার্শিয়াল ফিমেল সেক্স ওয়ার্কারস হু মে অপারেট ইন্ডিপেন্ডেন্টলি অর থ্রু আ পিম্প, ফর অ্যাকসেপ্ট প্রােগ্রাম রেটস দ্যাট ভ্যারি বিটুইন রুপিজ এইট হানড্রেড অ্যান্ড রুপিজ থার্টি থাউজ্যান্ড। দ্য মিনিমাম নাম্বারস অফ প্রােগ্রামস আন্ডারটেকেন পার উইক মে বি বিটুইন টু অ্যান্ড থ্রি অ্যারেঞ্জ মােস্ট অফেন, ইন প্লেসেস লাইক হােটেলস, রিসর্টস, প্রাইভেট ফ্ল্যাটস, ম্যাসাজ পার্লারস এটসেটরা। অল দিজ গার্লস আর লিটারেট অ্যান্ড কাম ফ্রম মিডল অ্যান্ড আপার মিডল ক্লাস ফ্যামিলিজ অর হােয়াইট-কলার গ্রুপস; মােস্ট অব হােল্ড আদার রেগুলার জবস ফ্রম হুইচ দে আর এবল টু আর্ন আ কনসিডারেবল অ্যামাউন্ট অফ মানি’। ‘সানন্দা’ পত্রিকার ২০০২ সালের ১৫ মে সংখ্যায় সাংবাদিক অনিরুদ্ধ ধর ‘কলকাতার কলগার্ল’ শীর্ষক একটি বিশেষ রচনা লেখেন। লেখাটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ভােরুকা পাবলিক ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট-এর গবেষণালব্ধ তথ্যের সাহায্যে লেখা। এর আগে ১৯৯৭ সালে সংবাদপত্রে চাকরি করার সময় কলকাতার পর্নো-সাহিত্য ও ছবি নিয়ে প্রতিবেদন লিখতে গিয়ে একজন কলগার্লের সঙ্গে আলাপ হয়। সানন্দা-র লেখাটি পড়ে ইচ্ছে হল এ বিষয়ে একটি পুরােদস্তুর বই লেখার। কিন্তু ইচ্ছে হলেই তো কাজটা হওয়ার নয়, সেজন্য দরকার এক্সটেনসিভ ফিল্ড ওয়ার্ক। আর আমি চাইছি বলেই যে কোনও গােপন দেহপসারিণী হাসি হাসি মুখ করে ইন্টারভিউ দিতে বসে যাবে না, সে কথা বলাই বাহুল্য!বনগাঁয় তথ্য আধিকারিক পদে থাকাকালীন আকস্মিকভাবে সুযােগ এসে গেল। ভােরুকা-র পেট্রাপােল শাখার ইনচার্জ গােবিন্দ ভৌমিক আমার অফিসে দেখা করতে এলেন ওদের সংস্থার কিছু প্রকাশনা নিয়ে। এই সব বইয়ের একটির নাম ‘দ্য ইনভিজিবল’। এ বই থেকেই তথ্য নিয়ে অনিরুদ্ধ ধর ‘সানন্দা’-র লেখাটি লিখেছিলেন। রাত জেগে পড়ে ফেললাম গােবিন্দর দেওয়া বইটা। প্রচুর নতুন তথ্য পাওয়া গেল। ১৯৯৯ সালে এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা থেকে গবেষণার কাজে হাত দেওয়া হয়। প্রধানত কলগার্লদের মধ্যে এইচআইভি ও অন্যান্য যৌন রোগ প্রতিরােধের কাজ করার জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও কলগার্লদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষিত ও তাদের নারী যৌনতা সংক্রান্ত ধারণা বিশ্লেষণ করাও ছিল এর বৃহত্তর উদ্দেশ্যের অন্তর্গত। গবেষণালব্ধ তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে কলগার্ল শব্দের একটি গ্রহণযােগ্য সংজ্ঞা নিরুপণ করা ছিল অন্যতম লক্ষ্য।দেহব্যবসা শুধুমাত্র লালবাতি এলাকার পরিসরে আটকে নেই। বিশ্বায়নের যুগে এক ফোনে ক্রেতার শয্যাসঙ্গিনী হতে হােটেল বা বাড়িতে পৌঁছে যায় পছন্দের নারী। তাকে পেমেন্ট দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা যায় ক্রেডিট কার্ড, নেট ব্যাঙ্কিং বা ইউপিআই অ্যাপ। এই কন্যারা দেহােপজীবিনী বটে, কিন্তু এদের চলাফেরা আদিমপেশার চেনা ছকের বাইরে। এরা কলগার্ল। বিমানসেবিকা, ব্যাঙ্ক একজিকিউটিভ, আইটি কর্মী কিংবা গৃহবধু সামাজিক পরিচয়ের আড়ালে এরা অর্থের বিনিময়ে পুরুষের কামনা চরিতার্থ করছেন। আদ্যন্ত গবেষণা ও ক্ষেত্রসমীক্ষা নির্ভর এই গ্রন্থ সামাজিক নৃতত্ত্বের পাঠ্যপুস্তক বা পর্নোগ্রাফি, কোনওটাই নয়। বহু কলগার্লের সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে লেখা বিস্ফোরক এ বইতে উন্মােচিত হয়েছে নারীদেহ বিপণনের অধুনা ধরনধারণ এবং পণ্যস্ত্রী জীবনেরজ্বালা যন্ত্রণা।
Be the first to review “কলগার্লের দুনিয়া -কাজল ভট্টাচার্য”
You must be logged in to post a comment.