Description
মহাযােগী মিলারেপার রহস্যময় জীবন-কাহিনী বহু যুগের তমসায় আবৃত। তুষারাবৃত হিমালয়ের অন্তরালে, দূর-দুর্গম তিব্বতের রহস্যময় অন্ধকারে ; মিলারেপার অভূতপূর্ব জীবন-কাহিনী প্রতিবেশী ভারতবর্ষের কাছে পর্যন্ত এ-যাবৎ অস্পষ্ট হয়ে আছে। অথচ তিব্বতের সাধন-রহস্য ভারতবর্ষেরই যােগশাস্ত্রের সম্মিলিত প্রকাশ।
ছাড়া আর কিছুই নয়। এই কথাটি ভাল করে বুঝতে হলে, তিব্বত এবং ভারতবর্ষের মধ্যে অতীতের বহু-যুগপ্রসারী যে যােগসূত্রটি
বিদ্যমান ছিল, তারই কতকগুলো অধ্যায় ইতিহাসের আলােয় নতুন করে পরীক্ষা করে দেখা দরকার।তিব্বতের সম্বন্ধে, এমনকি আধুনিক তিব্বতের সম্বন্ধে কতটুকুই।
বা আমরা জানি। আমরা জানি তিব্বত লামাদের দেশ, আধ্যাত্মিকতার দেশ, যাদুবিদ্যার দেশ—দুরতিক্রম্য চিরতুষারাবৃত অরণ্য-বেষ্টিত
একটি অজ্ঞাত মহাদেশ। সেখানকার অধিবাসীদের রীতিনীতি আচার-ব্যবহার, ধরনধারন আমরা কিছুই জানি না। যে স্থানের উপত্যকা গুলির উচ্চতা সমুদ্রতল থেকে প্রায় ১৫৬০০ ফুট, তার সম্বন্ধে আমাদের
কৌতূহল নিছক হতাশায় পরিণত না হয়ে পারে না। প্রথমতঃ তিব্বতে যাওয়া সহজ নয়। দ্বিতীয়তঃ কোনােরকমে সেখানে গিয়ে
উপনীত হলেই যে আমাদের জীবন-রহস্যের মর্মস্থলে প্রবেশ লাভ করা যাবে তা নয়।
দার্জিজলিও অঞ্চলে এবং কলকাতা সহরে মাঝে মাঝে বাণিজ্যরত যে দু-পাঁচজন তিব্বতী লামাকে আমরা দেখি, সচরাচর তাদের আমরা
কালতিকলশীল বিদেশী বলেই মনে করি ; কারণ আমরা না জানি তাদের ভাষা, না জানি তাদের ধর্ম ও সামাজিক জীবনের কোনাে কথা। অথচ যারা জানেন তারা বলেন, তিব্বতের আনুমানিক পঞ্চাশ থেকে ষাট লক্ষ অধিবাসীবৃন্দ ভারতবর্ষীয় জনগণেরই স্বগােত্র। চার লক্ষ তেষটি হাজার বর্গমাইল এই বিশাল ভূখণ্ডের নীতি ধর্ম সমাজ ব্যবস্থার পিছনে প্রাচীন ভারতবর্ষের যে অসামান্য দান ছিল, তার মূল অনুসন্ধানকরতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে কতকটা প্রায় প্রাগৈতিহাসিক যুগের কাছাকাছি।তেরশ’ বছর আগে রাজত্ব করতেন তিব্বতের এই বিশাল ভূখণ্ডে বৌদ্ধসম্রাট সং-সেন-গাম্পাে। যতদূর জানা যায় তিব্বতের তিনিই প্রথম একচ্ছত্র বৌদ্ধসম্রাট। তৃর্কস্থান এবং নেপাল ছিল তারই অধীনে এবং এ-কথাও মনে করবার কারণ আছে যে বিশালকায় চীন সাম্রাজ্যকেও একদা তার আনুগত্য স্বীকার করতে হয়েছিল।সম্রাট গাম্পাে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করে বজ্রযান বৌদ্ধ শাখার আওতায় কেমন করে এলেন সে সম্বন্ধে নিশ্চয় করে কোনাে সিদ্ধান্ত করা না গেলেও অনুমান করা যায় যে এই সংঘটনের মূলে তার প্রধান দুই
মহিষীর কিছু-না-কিছু প্রভাব নিশ্চয়ই ছিল। কারণ এই দুইজনই ছিলেন বৌদ্ধ। সে যাই হােক্, সম্রাট গাম্পাে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করে একান্ত ধর্মগতপ্রাণ হয়ে উঠেছিলেন এবং তাঁর সভাপণ্ডিত ‘সম্ভোট’কে প্রচুর ধন সম্পদ দিয়ে ভারতবর্ষে পাঠিয়েছিলেন।সম্ভোটের ভারতবর্ষে যাত্রার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারতের প্রাচীন অধ্যাত্ম বিদ্যার দুর্লভ গ্রন্থচয়ের আবিষ্কার ও সংগ্রহ।ভারতবর্ষের দিকে দিকে পরিভ্রমণ করে তিনি অসংখ্য হস্তলিখিত পুথি সংগ্রহ করে নিয়ে তিব্বতে ফিরে গেলেন। এই অভিযানের ফলে একদিক দিয়ে যেমন ভারতবর্ষের নিজস্ব সম্পদ বহুল পরিমাণে দেশান্তরে চলে গেল, তেমনি আবার এ-কথাও ঠিক যে ভারতবর্ষের বহুমূল্য এবং দুষ্প্রাপ্য পুথিগুলি এইভাবে স্থানান্তরিত না হলে হয়তো তাদের অধিকাংশেরই লুপ্ত হয়ে যাবার আশংকা ছিল।এই ঘটনা ঘটেছিল খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীর মাঝামাঝি।
Be the first to review “মিলারেপা তিব্বতের প্রাণপুরুষ- শ্রী বিভুপদ কীর্ত্তি”
You must be logged in to post a comment.