Description
এই বইয়ের ভূমিকায় লেখক ব্রজমাধব ভট্টাচার্য লিখছেন:-
এ যাত্রা আরম্ভ হয়েছিল এবং শেষও হয়েছিল ১৯৫৪তে। মীরাকদল সেতুর তলা দিয়ে ঝিলমের জল অনেক বয়ে গেছে। পীর-পঞ্জেলীর শিখরে শীতে শীতে হিমানী জমেছে ; গ্রীষ্মে গ্রীষ্মে গলে গেছে। তাজবাসের হিমবাহ নড়ে-চড়ে শাদা থেকে নীল, নীল থেকে শাদা হয়েছে অনেকবার। এটা ১৯৬৬। কাশ্মীরে জনতা বদলেছে ; জননায়ক বদলেছে ; শেখ মুক্তি পেয়েছেন ; শেখ আবার
অন্তরীণ হয়েছেন। চীন ভারতকে কামড়েছে ; পাকিস্তান আঁচড়েছে। ভারতবর্ষ রক্তস্নান সেরে নতুন করে পূর্ণাভিষিক্ত তন্ত্র সাধনায় আসন পেতেছে। নেহরুজী আর নেই। শাস্ত্ৰীজী এসেছিলেন ; চলে গেছেন। এখন শ্ৰীমতী ইন্দিরাকে কাশ্মীরের জনসাধারণের মনে আসন নিতে হবে। যে কালের কথায় এ বই অবগাহন করেছে সে কালপ্রবাহ কালধর্মে অনেক বদলেছে।… কিন্তু বই আমি বদলাই নি। লেখকমাত্র বই লেখেন দেশ ও কালের পরিপ্রেক্ষিতে। ভূতশুদ্ধি,আসনশুদ্ধি করে সঙ্কল্পবাক্য উচ্চারণ করার পর ধ্যানধৃত প্রাণ-স্পন্দিত মূর্তির রূপান্তর অশুচিতাকে প্রশ্রয় দেয়, সাহিত্যের ধর্মহানি ঘটায় ; ইতিহাসকে বিপরীতবৃত্তি করে তােলে। পাঠকের কাছে লেখকের তাই বিনীত নম্র নিবেদন
যে এই গ্রন্থের প্রতিটি পর্যায়কে যেন তারা ইতিহাসের কালজয়ী পদক্ষেপ বলেই
স্বীকৃতি দেন।•••তবু তো চিরদিনের হিমালয়, পরিহাসপুর, দ্রাস, ভূতরাষ্ট্ৰধ্বন অজর
অমর ; মার্তণ্ডস্বামীর সূর্যমন্দিরের নিকটস্থ গুহায় মহাযােগীদের তপশ্চর্যা তাে আজও ভাস্বর ; আজও অনন্তনাগ, ভেরনাগ, শেষনাগ, অমরনাথ, পঞ্চতরণীর কল-গান অব্যাহত।
•••সেই চিরদিনের কাশ্মীরকে চিরকালের সাহিত্যে নিয়ে যাবার প্রয়াসে চিরজীবম্ভ পাঠক-মনীষা, রসিক-মনের কাছে বিনীত নিবেদন করছে তার এই সাধনাকে তারা তাদের আশীর্বাদে এবং বরে সার্থক করে তুলুন।
কাশ্মীরে আরও চারটি তীর্থে পয়গম্বরের কেশ আছে বলে শােনা যায়।মেলাও হয় প্রতিবৎসর। সেগুলাের নাম—কলসপুরা, অনদরওয়ালা, গৌরা ও ডাঙ্গরপুরা। নবী পয়গম্বরের জিয়ারতে যে চুল দেখান হয় সেটা নাকি সত্যই পয়গম্বরের চুল । হিন্দু মুসলমান মিলিতভাবে মানং করে, ভেট চড়ায় এসব তীর্থে।হরিপর্বতের নিকটস্থ জামি মসজিদ কাশ্মীরের বৃহত্তর উপাসনাগার। সুলতান সিকন্দর (১৩৯০–১৪ ১৪ খৃঃ অঃ) এই মসজিদ তৈরী করার পর বহুবার এটা ভাঙা গড়ার মধ্য দিয়ে, বারবার রাজার পর রাজার সাহায্যে পুননিমিত হতে হতে বর্তমান আকার পেয়েছে। এ মসজিদে বহু হিন্দুর অজস্র দান আছে।শ্রীনগরের মদিনসাহেব মসজিদ, আলি মসজিদ, পাথর মসজিদ, অখণ্ড মূল্লা মসজিদ এগুলােও দেখবার মতো।এই যে পীরদের বা ঋষিদের সমভাবে কাশ্মীরীরা পূজা করে এসেছে এজন্য বিদেশে ইসলাম সমাজে কাশ্মীরীদের ‘পীর-পরস্ত’ বলে উপহাস করা হয় ।
গোঁড়া মুসলমান কাশ্মীরী মুসলমানকে একশাে পার্সেন্ট মুসলমান মনে করতে সঙ্কুচিত হয়। ওরা মাথা নীচু করে প্রণাম করে, খালি পায়ে তীর্থ যাত্রা করে,তীর্থ ধুলি মাথায়, অঙ্গে, মাখে! ওরা কোনও তীর্থভূমির সামনে দিয়েও কোন যানে চড়ে এমনকি ঘোড়ায় চড়ে যায় না Walter Lawrence এর Valley of Kashmir এ-সম্বন্ধে চাক্ষুষ দেখা একটি ঘটনার উল্লেখ আছে।
Be the first to review “কল্হনের দেশে -ব্রজমাধব ভট্টাচার্য”
You must be logged in to post a comment.