Description
এই গ্রন্থের শিরােনামে আবৃত্তিকে ‘শিল্প’ আখ্যাও দিতে চাওয়া যুক্তি সংগত কিনা তা রূপায়ণ করতে আমাদের খুঁজে পেতে হবে আবৃত্তির উৎসস্থলটি ঠিক কোথায়।কেমন করে ধীরে ধীরে এবং কোন সরণি পার করে আজ আবৃত্তি ‘শিল্প’ পদমর্যাদায় স্বীকৃতি পাবার দাবিদার হয়ে উঠল। আবৃত্তি আগে না কবিতা আগে। শিল্প সৃষ্টির কোন
রহস্যমায়ায় অনাবৃত এই প্রাচীন কলাটি! অন্যদিকে লেখক বুঝতে চেয়েছেন ‘থিয়েটারের’ সাথে ‘আবৃত্তি’ তার যােগ কোথায় ? যােগসূত্র-ই বা কী! থিয়েটার কি আবৃত্তিমুখী ছিল, নাকি আবৃত্তিই থিয়েটারে কোনও বিশেষ পরীক্ষামূলক ব্যবহারে নিজেকে থিয়েটারে অন্তর্ভুক্ত করে ফেলেছিল।এই গ্রন্থে সেই সব প্রশ্নেরও উত্তর খুঁজেছি যা আমাদের ভাষায়, যেমন রূপরেখায়
প্রাচীন কোনটি— ‘আবৃত্তি’ না ‘থিয়েটার’? কেমন করে প্রভাবিত হল থিয়েটার ? অথবা আজ এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে আবৃত্তি কি মৌলিক শিল্প-মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত ? …ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর পাবার জন্যই লেখকের অনুসন্ধিৎসার শিরােনাম-আবৃত্তি শিল্প এবং তার প্রয়ােগ।গ্রন্থের বিষয় ও শিরােনামেই বােঝা যায় ভাষা এখানে একটি বড় ব্যাপার। কারণ আবৃত্তির (কবিতার) পঙতি-ই বলি বা নাটকের সংলাপ-ই বলি তা সবই ভাষায় বােঝাতে হয়। মুখ নিঃসৃত যে কোনও শব্দমালাই যেমন ভাষা নয়, সংলাপ বা কবিতার(আবৃত্তির) লাইন নয় তেমনই ভাষায় প্রকাশিত সংলাপ বা আবৃত্তি আসলে কতগুলি
নির্দিষ্ট শব্দমালাই বটে। তাই শুরুর দিকে আমাদের মুখ নিঃসৃত শব্দ সৃষ্টি এবং মানুষের
ভাষা তৈরির প্রাথমিক বুনিয়াদ কীভাবে গড়ে উঠেছিল তা আলােচনা করার প্রয়ােজন বােধ করি।আবৃত্তি ও অভিনয়ের মধ্যে যেমন বেশ কিছু ব্যাপারে অমিল আছে, তেমন মিলও আছে। একজন অভিনেতা বলেন নাটককারের সংলাপ এবং একজন আবৃত্তিকার কবির কবিতার পঙক্তি। কোনও নাটককার যখন স্বগত সংলাপ লেখেন কিংবা কোনও রােমান্টিক সংলাপ, তার মধ্যে যেমন থাকে কাব্যময়তা তেমনই যখন কোনও কবি কবিতা লেখেন, তিনিও কিন্তু তখন শুধুমাত্র পাঠকের কথা ভেবে কাগজের ওপর কিছু শব্দের আলপনা আঁকেন না। তাঁর প্রায় অবচেতনে হয়ত তিনি অজ্ঞাতসারে নিজের
সাথে কথাও বলেন। অনেক শ্রোতার কাছে পৌছে যাবে ভেবে তার যে নিজের সাথে কথা বলা সেটাই একটা স্বগত সংলাপের মত করে কবিতার আকার নিতে থাকে। তাই বলা যেতে পারে নাটকে যেমন স্বগত সংলাপ থাকে, ঠিক তেমনই কবিতাও একটা দীর্ঘ আত্মকথনের মতই।
সংস্কৃত অলংকার শাস্ত্রে বাক্-ভাষার মহিমা সম্বন্ধে সুন্দর একটি উক্তি আছে,উক্তিটির সারমর্ম এই যে যদি ‘শব্দ’-জ্যোতি না থাকত, তা হলে সমস্ত ভুবন অন্ধকারে নিমজ্জিত হত।
Be the first to review “আবৃত্তি শিল্প এবং তার প্রয়োগ -অরুময় বন্দ্যোপাধ্যায়”
You must be logged in to post a comment.