Description
গত শতাব্দীর পঞ্চাশ দশক থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিদ্যায়তনিক পরিসরে এবং সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্রকলা একটি বিদ্যা-শাস্ত্র হিসাবে পঠিত হচ্ছে। ইংরেজি ভাষাসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় চলচ্চিত্রকলার নানাদিকের ওপর বিস্তর গ্রন্থ লিখিত হয়েছে। বাংলা ভাষায় চলচ্চিত্র-সাহিত্যের ওপর প্রচুর রচনা লিখিত হলেও এই শাস্ত্রবিষয়ক পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থের অপ্রতুলতা রয়েছে। বর্তমান গ্রন্থে বাংলা ভাষায় এই কলার উদ্ভবের পিছনের বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ড ও ক্রমবিকাশের একটি ধারাক্রম অন্বেষণের চেষ্টা করা হয়েছে; চলচ্চিত্রকলার
নানামুখী সংজ্ঞা এবং এর স্বরূপ সম্পর্কে আলােচনা করা হয়েছে; এই কলারূপের উপকরণের বিশেষত্ব অনুধাবনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে; এর বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ
উপকরণসমূহের বিবরণও রয়েছে, স্বল্প পরিসরে হলেও। এবং এই কলার প্রাকরণিক দিকসমূহ ব্যবহার করে পৃথিবীর নানাদেশের চলচ্চিত্রস্রষ্টাদের সৃষ্টির মাধ্যমে যেসব চলচ্চৈত্রিক
ধারাসূমহের আবির্ভাব ঘটেছে, সেই ধারাসমূহের অভ্যন্তর বৈশিষ্ট্য ও স্রষ্টাদের মনােভঙ্গির বৈভিন্নতার পরিচয়ও রয়েছে।চলচ্চিত্র সৃষ্টির সাথে সাথে এর কলারূপ অধ্যয়নের প্রক্রিয়াও
শুরু হয়েছে এর আবির্ভাব কাল থেকেই। চলচ্চিত্র দেখা ও বীক্ষণ করার নানা দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, এসব দৃষ্টিভঙ্গিকে ঘিরে জন্ম নিয়েছে নানামূখী চলচ্চিত্রতত্ত্ব। এসব তত্ত্বের সাহায্যে চলচ্চিত্রপাঠের প্রয়ােজনীয়তাকে স্বীকার করে নেয়াও হয়েছে ।মৎ প্রণীত গ্রন্থে চলচ্চিত্রতত্ত্বসমূহ সম্পর্কে একটি ক্ষীণায়তন।
অধ্যায় রয়েছে যা চলচ্চিত্রবিদ্যার শিক্ষার্থীদের চলচ্চিত্র বীক্ষণকর্মে প্রয়ােজনীয় তাত্ত্বিকভিত্তি জোগাবে, কিছুটা হলেও।ধারণা করি, যারা চলচ্চিত্রকলার সাংগঠনিক উপাদান তথা
দৃশ্যমাত্রা, শব্দমাত্রা ও সম্পাদনাগতমাত্রা, এর অবয়বিক নানাদিক, কলারূপ, রূপান্তর, কান্তিতত্ত্ব ইত্যাদি সম্পর্কে অবগত হতে আগ্রহী বইটি তাদের উপকারে আসবে।চলচ্চিত্র সর্বকলা আত্মীকৃত এক শিল্প,যােগাযােগ ও প্রকাশ মাধ্যম। বেশ কতগুলাে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ওপর এই মাধ্যমের আত্মপ্রকাশ নির্ভরশীল ছিল। উনিশ শতকের শেষ দশকে প্রাত্যহিক বাস্তবতার চলমান চিত্র (Moving image) প্রদর্শনের মাধ্যমে চলচ্চিত্রশিল্পের যাত্রা শুরু হলেও বহু পূর্ব থেকেই চলমান অবস্থায় বস্তুকে প্রত্যক্ষ করার আকাঙ্ক্ষা, বস্তুর গতিকে পুনরুৎপাদন করার ইচ্ছা বিজ্ঞানী, শিল্পী ও দার্শনিকদের মধ্যে লক্ষ করা গেছে। উনিশ শতকের শুরু থেকেই এই ইচ্ছা বাস্তবরূপ নিতে শুরু করে প্রধানত কতগুলাে বৈজ্ঞানিক আবিস্কারকে কেন্দ্র করে। বস্তুত স্থিরচিত্র ধারণ ও পরিস্ফুটন সম্ভব হওয়ার পর থেকেই চলমানচিত্র দর্শন প্রচেষ্টার শুরু।চলচ্চিত্রকলা উদ্ভবের ইতিবৃত্ত তথা এর জন্ম-বৃত্তান্ত (Genealogy) কার্যত তিনস্তর বিশিষ্ট: ফটোগ্রাফি, প্রজেকশন্ ও পারসিসটেন্স অভ ভিশন। এই তিনটি দিকে নানারকম গবেষণা তথা পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলেই চলচ্চিত্রকলার জন্ম সম্ভব হয়েছে। ফটোগ্রাফি তথা আলােকচিত্রগ্রহণ পদ্ধতির ইতিহাস শুরু হয়েছে সােড়শ শতাব্দীতে ‘Camera obscura’-এর উদ্ভাবনের ফলে যার মাধ্যমে বাইরের আলােকিত চিত্র ধারণ করে অন্ধকার ঘরে প্রক্ষেপণ সম্ভব হয়। এরপর ১৮০৩ সালে Thomas Wedwood এবং Humphrey Davy ফটোগ্রাফিক ইমেজ ধারণে সক্ষম হন কিন্তু
তাকে স্থায়ী ইমেজে তথা স্থিরচিত্রে পরিণত করতে পারেননি।
Be the first to review “চলচ্চিত্রকলার রূপ-রূপান্তর -সাজেদুল আউয়াল”
You must be logged in to post a comment.