বাংলা লোকনাট্য সমীক্ষা -গৌরীশংকর ভট্টাচার্য

Call / WhatsApp : +91 9563646472

To purchase / enquire about the book, send a WhatsApp message or call between 11 AM and 11 PM.

Description

“বিংশ শতকের প্রথমে ত্রৈলােক্যতারিণী, ভবতারিণী ও কটাগােলাপীর দলে স্ত্রী-ভূমিকায় নারী আসরে অবতীর্ণ হত।” তথাপি লােকনাট্যে
নারীচরিত্রে রূপানুরূপ ভূমিকা গ্রহণের রীতিই প্রচলিত ছিল। নাট্যশাস্ত্রকার ভরত অভিনয়ে তিন প্রকার ভূমিকা গ্রহণের কথা উল্লেখ করিয়াছেন,—অনুরূপ,বিরূপ ও রূপানুরূপ । চরিত্রের বয়স ও দৈহিক গঠন অনুযায়ী স্ত্রী ও পুরুষের ভূমিকায় যথাক্রমে নারী ও নরের স্বাভাবিক রূপসজ্জা গ্রহণকে অনুরূপ, এই দুইটি বিষয় সম্পর্কে বিবেচনা না করিয়া ভূমিকা গ্রহণ করাকে বিরূপ এবং বয়স ও চেহারা অনুযায়ী নারীকে নর ও নরকে নারী সাজানাের রীতিকে রূপানরূপ বলা হয়। প্রাচীনকালে সকল দেশেই পুরুষ কর্তৃক রূপানুরূপ ভূমিকা গ্রহণের রীতি প্রচলিত ছিল। যাত্রারও প্রাচীনকাল হইতেই এই রীতি প্রচলিত চৈতন্যদেবও নারী চরিত্রে অভিনয় করিয়াছেন।
পুরুষকে নারী সাজিতে হইলে দাড়ির কালাে দাগ ঢাকিয়া দিবার জন্য স্বভাবতই মুখে চড়া রং মাখানাে প্রয়ােজন। পুরুষ চরিত্রে স্বাভাবিক মেকআপ থাকিলেও নারী ভূমিকাভিনেতা পুরুষের জন্য যাত্রায় high make-up ব্যবহৃত
হয়। নারী-চরিত্রাভিনেতা নির্বাচনে অধিকারীরা অবশ্যই কণ্ঠ ও দৈহিক গঠনের প্রতি লক্ষ্য রাখেন। অনেক সময় লােকনাট্যের আসরে এমনও দেখা যায় যে চেহারা, কণ্ঠ ও অভিনয় নৈপুণ্যের জন্য স্ত্রী-চরিত্রাভিনেতা পুরুষ কি নারী তাহা‌বুঝিয়া উঠা অসম্ভব হইয়া পড়ে।“উনিশ শতকের যাত্রায় নারী-চরিত্রাভিনেতা পুরুষ অনেক সময় বেশবিন্যাসের জন্য নাক-কান ছেদা করত আর মেয়েদের মত লম্বা চুল রাখত। বিশ শতকে এ রীতি বন্ধ হয়ে যায়। এতে এদের মেক-আপের স্বাভাবিকতা অনেকটা বেড়ে যেত।” যাত্রার অভিনেতাদের অঙ্গ-রচনার (make-
up) জন্য পৃথক make-up man-এর প্রয়ােজন হয় না। ছােট ছেলে হইতে আরম্ভ করিয়া প্রবীণ অভিনেতা পর্যন্ত সকলেই অঙ্গ-রচনার কাজ স্বহস্তে সম্পন্ন করেন।সাজঘরে প্রত্যেকের জন্য এক একটি make-up box সাজানাে থাকে। সময়মত‌ যে যাহার অঙ্গরচনা সমাপ্ত করিয়া অভিনয়ের জন্য প্রস্তুত হইয়া থাকেন। এই রীতি
প্রচলনের ফলে অভিনেতাদের অঙ্গরচনা কৰ্ম অভিনয় শুরু হইবার আধ ঘণ্টা পূর্বে
আরম্ভ করিলেও কোন অসুবিধা হয় না। নাট্যপ্রয়ােগের দিক হইতে অলঙ্করণে(costume) চরিত্রের বিভিন্ন ভাবরসের প্রতি দৃষ্টি রাখা অবশ্যকর্তব্য। এই প্রসঙ্গে যুগবৈশিষ্ট্য ও ঐতিহাসিকতা বজায় রাখা সম্পর্কে যে কোন প্রকার অবহেলা অনুচিত।কিন্তু পোশাক-পরিচ্ছদের দিক হইতে যাত্রায় পৌরাণিক ও ঐতিহাসিক পালায় সাধারণত স্বাভাবিকতা বজায় রাখা হয়না রামায়ণ মহাভারতের কাহিনী অবলম্বনে রচিত  পালায়‌ও ঝকঝকে জামা, ব্লাউজ , ম্যান্টেল প্রভৃতি ব্যবহৃত হয়। হিন্দু রাজাদের জামা ও মুসলমান সম্রাটের জামায় কোন পার্থক্য থাকে না । অশোক, বিক্রমাদিত্য মহীপাল, শশাঙ্ক, পৃথ্বীরাজ,ও শিবাজীর পোষাক একই রকম।যাত্রার অধিকারীদের সকলে এই বিষয়ে এখনো সচেতনতা লাভ করেন নাই, বলে এই বইয়ের লেখক মনে করেন।

Be the first to review “বাংলা লোকনাট্য সমীক্ষা -গৌরীশংকর ভট্টাচার্য”