Description
এ বইতে সংকলিত রচনাগুলি ১৯৬৪ থেকে ১৯৭১-এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে লিখিত, কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে বিভিন্ন মনে হলেও এগুলির মধ্যে প্রবীণ সমাজবিজ্ঞানীর নৈর্ব্যক্তিক পর্যবেক্ষণ ও সমকালীন সামাজিক-রাজনৈতিক রূপবদলের সজাগ বিশেষণ লেখাগুলিকে এক অনিবার্য
ঐক্যসূত্রে গ্রথিত করেছে। এই সময়সীমায় ইতিহাসের ধারায় অনেক ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়েছে সারা পৃথিবীতে যেমন আমাদের দেশেও তেমন। ধনতান্ত্রিক দুনিয়ার আশ্চর্য বৈজ্ঞানিক ও ‘টেকনোলজিকাল’ উন্নতি, সেই সঙ্গে বিপ্লব প্রতিহতির অত্যাশ্চর্য কলাকৌশল; কমিউনিস্ট আন্দোলনের সংকট ; ছাত্র ও যুবসমাজের নতুন মনােভঙ্গি, এশিয়া আফ্রিকা লাটিন আমেরিকার দেশে দেশে সাম্রাজ্যবাদী শােষণমুক্তি ও গণমুক্তির জোয়ার এবং সেই গণসংগ্রামে নতুন এক বুদ্ধিজীবীশ্রেণীর অবদান,তরুণমানসে তার বিচিত্র ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ; সেই সঙ্গে
“অ্যালিয়েনেশনের সমস্যা, মধ্যবিত্তের সমস্যা, বিদ্রোহ ও বিপ্লবের প্রশ্ন। এবং কমিউনিজমের সমস্যা। এ সমস্ত প্রশ্ন ও সমস্যায় লেখক আলোড়িত। সমাধান বা উত্তর তিনি দেওয়ার চেষ্টা করেন নি। মার্কসীয় সমাজবিজ্ঞানে আস্থা ও শ্রদ্ধা আছে বলেই লেখক সততার সঙ্গে সেসব প্রশ্নের জবাব সন্ধান করেছেন।এই পরিমার্জিত নতুন মুদ্রণে কিছু-কিছু সংযােজন ছাড়াও
যুক্ত হয়েছে ‘পরিশিষ্ট ১৯৭৭‘।যে মন নিয়ে যােব চার্নক সূতানুটিতে বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করে ভবিষ্যৎ কলকাতা মহানগরের ভিত প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেই মন হল পাশ্চাত্ত্য বণিকের সজাগ ব্যবসায়ীর মন। নিরাপদ বাণিজ্যে আর্থিক মুনাফার হিসেব ছাড়া কলকাতার প্রতিষ্ঠাতার মনে সেদিন আর কোনাে মানবিক সুচিন্তা উদ্ভাসিত হয়নি। জন্মকালের এই
মনই কলকাতা শহরের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে পরিপুষ্ট ও পাকাপােক্ত হয়েছে। ১৬৯০ থেকে ১৯৬১ পর্যন্ত প্রায় পৌনে তিনশ বছরে এই অর্থলোলুপ বণিকের মন পুজিবাদীর গর্বোদ্ধত ভঙ্গিমায় আকাশ-স্পশী হয়েছে কলকাতা মহানগরে। কলকাতার মানুষের মনের কেন্দ্রস্থ চিন্তা ও অনুধ্যান আজ টাকা এবং আজ মানবিক সাংস্কৃতিক গুণাগুণের যাচাই হয় টাকার কৃষ্টিপাথরে। মহানাগরিক জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রতীক হল টাকা। টাকা সচল তাই মানুষও সচল। এমনকি মানবহৃদয়ের যে সমস্ত আবেগ অনুভূতি ভাবানুভাব ও সহজবৃত্তিকে আমরা এতদিন শাশ্বত সত্য বলে জানতাম সেগুলিও আজ টাকার চাকচিক্যের কাছে ম্লান হয়ে গেছে। স্নেহ মায়ামমতা প্রেম ভালবাসা শ্রদ্ধাভক্তি সমস্ত মানবিক হৃদয়বৃত্তিকে বণিকের মনােবৃত্তি আচ্ছন্ন
করে ফেলেছে। ডালহৌসি চৌরঙ্গির প্রশস্ত রাজপথ ও স্কাইস্ক্রেপার থেকে নগর প্রান্তের অখ্যাত অলিগলি বস্তি এবং শহরতলির সুদূর
আনাচকানাচ পর্যন্ত এই বণিকবৃত্তির নির্লজ্জ প্রকাশ দেখতে পাওয়া যায়। চার্নকের দেশী ও বিদেশী উত্তরাধিকারীরা সমস্ত কলকাতা
মহানগরকে ধীরে ধীরে এক বিশাল বাণিজ্যকুঠিতে পরিণত করেছেন
এবং মহানগরের মানুষগুলােকে তৈরি করেছেন বাণিজ্যের বেচা-কেনার পণ্যরূপে।
Be the first to review “মেট্রোপলিটন মন মধ্যবিত্ত বিদ্রোহ -বিনয় ঘোষ”
You must be logged in to post a comment.