মানব-প্রেমিক শ্রীনিত্যানন্দ -ড.উমা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত

Call / WhatsApp : +91 9563646472

To purchase / enquire about the book, send a WhatsApp message or call between 11 AM and 11 PM.

Description

শ্রীচৈতন্য কে যদি বাঙালির হৃদয় মন্থন-জাত বলা হয়,তাহলে নিত্যানন্দ হলেন সেই অমৃতের স্রষ্টা ও পরিবেশনকারী।যেমন শ্রীরামকৃষ্ণের ক্ষেত্রে বিবেকানন্দ,শ্রীঅরবিন্দের ক্ষেত্রে শ্রীমা, তেমনি শ্রীচৈতন্যের ক্ষেত্রে নিত্যানন্দের নাম।
নিত্যানন্দ প্রেমভক্তির ডালি নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন গৌড়দেশের পথে পথে।জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে প্রচার করতে লাগলেন কৃষ্ণপ্রেম। বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে পরিভ্রমণ করলেও পানিহাটি ও খড়দহ তাঁর জীবনে এক উল্লেখযােগ্য অধ্যায়।উত্তর ২৪ পরগণা জেলার ব্যারাকপুর মহকুমার অন্তর্গত দুটি প্রাচীন জনপদ
পানিহাটি ও খড়দহ। উত্তরে কাঞ্চনপল্লী থেকে দক্ষিণে বরাহনগর পর্যন্ত এই মহকুমা বিস্তৃত। এই মহকুমার পশ্চিমে হুগলি নদীর তীর ধরে বৈষ্ণব ধর্মের প্রসার ঘটেছে। কাঞ্চনপল্লীর (বর্তমান কাঁচড়াপাড়া) সেন শিবানন্দের পাট থেকে শুরু করে বরাহনগরের পাটবাড়ি পর্যন্ত এই অঞ্চল পরিণত হয়েছে বৈষ্ণবতীর্থে। কত না কথা, কাহিনি ও ঘটনার সাক্ষী এই দুটি জনপদ।
জানা যায়, অম্বিকা-কালনায় শ্রীচৈতন্য পার্ষদ গৌরীদাস পণ্ডিত তাঁর বাড়িতে গৌর নিতাই মূর্তিযুগলের পূজা প্রথম প্রবর্তন করেন। এর পর ঘরে ঘরে যুগলমূর্তির পূজা প্রবর্তিত হয়। মহাপ্রভুর জীবৎকালেই এই ঘটনা ঘটেছিল। এরপর নিতাই-গৌর বাংলার মন্দিরে মন্দিরে রাধাকৃষ্ণের মূর্ত বিগ্রহরূপে পরিগণিত হলেন।
আবার, শ্রীগৌরাঙ্গ রাধাকৃষ্ণের মিলিত বিগ্রহরূপে এককভাবে পূজিত হতে থাকলেন।কোন কোন মন্দিরে শ্রীগৌরাঙ্গকে রাধামূর্তি মনে করে বিগ্রহের মাথায় দেবীর আচ্ছাদনও দেওয়া হয়েছিল। এমন কোন কোন মন্দিরে আমরা শুধুমাত্র মস্তক আবরণীসহ শ্রীগৌরাঙ্গ মূর্তি দর্শন করেছি।লক্ষ্য করার বিষয় হােল, বাংলার প্রতি ঘরে এবং মন্দিরে মন্দিরে যে হাজার হাজার নিতাই-গৌর মূর্তি লক্ষ্য করা যায়, সেখানে বেশভূষাসজ্জিত মূর্তিই লক্ষ্য করা যায় বেশি। কোন কোন স্থানে অদ্বৈতাচার্যের মূর্তিও লক্ষ্য করা গেছে। এর থেকেই বােঝা যায়, গৌরনিতাই-এর গার্হস্থ্য ধর্মাশ্রিত প্রেমঘন হরিনাম সংকীর্তনরত মূর্তিটি বাঙালি মানসপটে যেন আঁকা হয়ে গিয়েছিল। এই বিগ্রহ মূর্তিই যুগ যুগ
ধরে পূজিত হয়ে আসছে। পল্লীবাংলার যে কোন বৈষ্ণব-সংকীর্তনে এই মূর্তিরই পুজোপাঠ হয়।
মহাপ্রভু ও নিত্যানন্দের আবির্ভাবের পরবর্তীকালে বাংলায় হিন্দু আমলের
‘শিখর’-মন্দির নির্মাণ ধারার বদলে ‘চালা’, ‘দোচালা’, ‘জোড়বাংলা’ ‘চাঁদনি,‘একরত্ন’, ‘পঞ্চরত্ন’, ‘নবরত্ন’, ‘ত্রয়ােদশরত্ন’, ‘সপ্তদশরত্ন’ প্রভৃতি মন্দির অনেক তৈরি হয়েছিল যার অস্তিত্ব এর আগে ছিল না, বিশেষ করে রত্ন’-শৈলীর। সু-উচ্চ ‘শিখর’ দেউলের পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত সরলীকৃত ছােটখাটো দেউল মন্দির এ সময়
অনেক নির্মিত হতে থাকল। টেরাকোটা-ফলক, বিশেষ করে রামায়ণ মহাভারত,পৌরাণিক কাহিনি কৃষ্ণলীলার ফলক প্রথম দিকে তেমন বসানাে হােত না,বসানাের প্রচলন তেমন হয় নি, সামান্য কয়েকটি ক্ষেত্র ছাড়া। কিন্তু মহাপ্রভু ও
প্রভু নিত্যানন্দের অলৌকিক লীলাবিলাস ও প্রাণস্পর্শী সংকীর্তনের ফলে বাঙালি-মনে তা গভীর রেখাপাত করায় মন্দির টেরাকোটা শিল্পে তার উত্তরােত্তর বহিঃপ্রকাশ ঘটতে লাগল। পৌরাণিক রাধাকৃষ্ণলীলা কাহিনি বা দৃশ্য মন্দিরটেরাকোটা শিল্পে উল্লেখযােগ্য স্থান অধিকার করল। বিষ্ণুপুর (বাঁকুড়া), গােকর্ণ (মুর্শিদাবাদ) ও বৈদ্যপুরে (বর্ধমান) ইঁটের মন্দিরগুলােতে আমরা প্রথমে অল্পস্বল্প টেরাকোটা লক্ষ্য করি। এগুলাে সবই তৈরি হয়েছিল ষােড়শ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে। বিষ্ণুপুরের প্রসিদ্ধ ‘রাসমঞ্চ’ এর মধ্যে প্রধান (আ, ১৬০০ খ্রিস্টাব্দ)।মহাপ্রভু ও নিত্যানন্দের উদ্দাম সংকীর্তন আপামর সমস্ত বাঙালিকে প্রেমবন্যায়
ভাসিয়ে তুলেছিল। তাঁরা অবতার-পুরুষরূপে মানুষের মনে এত গভীরভাবে অনুপ্রবিষ্ট
হন যে, এই যুগের (সতের-আঠার শতক) যে অজস্র মন্দির নির্মিত হয়, তার অনেকগুলিতেই এঁদের হরিনামসংকীর্তন দৃশ্যের জীবন্ত চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। প্রায় প্রতিটি ‘টেরাকোটা’ ফলক সজ্জিত মন্দিরগাত্রে নিতাই-গৌরের সংকীর্তন দশ্য প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। প্রধানত গৌরনিতাই মূর্তিই প্রাধান্য পেয়েছে।

Be the first to review “মানব-প্রেমিক শ্রীনিত্যানন্দ -ড.উমা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত”