আমাদের সাহিত্য এবং সমাজবিজ্ঞান এমন একখানা গ্রন্থের জন্য অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করছিল। ১৪১১৮ বঙ্গাব্দের আনন্দ পুরস্কারে ভূষিত এই গ্রন্থে প্রাপক মিহির সেনগুপ্ত দেশভাগের প্রেক্ষাপটে তার নিজের জীবনের প্রথম সতেরো-আঠেরো বছরের গল্প বলেছেন।
ভারতবর্ষের স্বাধীনতা লাভের বছরে জন্মগ্রহণ করে মিহির দেশভাগের ট্রমা উপলব্ধি করেছেন প্রথমে পূর্ব-পাকিস্তানের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে এবং পরে পড়াশুনার কারণে জেলাশহরে বসে।আমাদের সাহিত্যে দেশভাগ বিষয়ে যে অকিঞ্চিৎকর লেখালেখি আছে সেসব মূলত পূর্বপাকিস্তান থেকে এদেশে আসা মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্নভঙ্গ, জীবনসংগামের কাহিনি। মিহিরের ‘বিষাদবৃক্ষ’ ঠিক এর উল্টো। তিনি একটি ইসলামি রাষ্ট্রে সংখ্যালঘু। সম্প্রদায়ের মানুষ হিসাবে বসবাস করে দেখেছেন দেশভাগ উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের জীবনে কী ভয়াবহ এক বাস্তবতার জন্ম দিয়েছে। কীভাবে একসময়ের শিক্ষিত,) স্বচ্ছল পরিবারগুলোর পরিবর্তন হচ্ছে, হচ্ছে সর্বার্থে অধঃপতন, উঠে আসছে নতুন শ্রেণি, নতুন মানুষ এবং তৈরি হচ্ছে নতুন সামাজিক ও ধর্মীয় সম্পর্ক। তাঁর ভাষায় ‘অপবর্গী বা অপবর্ণী’ মানুষের পরিণতিই বা কী হচ্ছে, সমান গুরুত্ব এবং দরদ দিয়ে মিহির লিখেছেন সেসব কথা। সম্ভ্রান্ত ভূস্বামী পরিবারের সন্তান মিহির জীবন-সংগ্রামে কীভাবে নিজের শ্রেণিগণ্ডি অতিক্রম করে নিম্নবর্গের শ্রৈণিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন, ‘বিষাদবৃক্ষ’ সেই যন্ত্রণারও দলিল। এই কঠিন কাজটি করতে গিয়ে তিনি নিজেকে কিংবা নিজের পরিবারকেও তিক্ত উন্মোচনের গ্লানি থেকে আড়াল করেননি।
‘বিযাদবৃক্ষ’ একখানি শক্তিশালী এবং বিষাদময় আত্মস্মৃতি যা এই উপমহাদেশের এক ভয়াবহ সময়ের প্রতিবিম্বিত দর্পণমাত্র।