[wbcr_html_snippet]: PHP snippets error (not passed the snippet ID)
উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে বাংলা শিশুসাহিত্যের বিকাশের ধারা ছিল দ্রুততর।
তার আগে ১৮০০-১৯০০, এই একশাে বছরের প্রথম দিকে শিশুসাহিত্য ছিল লােকজ
উৎসজাত এবং সংস্কৃত ও আরব্য-পারস্য গল্পগাথা থেকে সংগৃহীত। ঈশপস ফেবলস,
লা ফতে কিংবা ক্ৰীলফের নীতিগল্প থেকেও কিছু কিছু উপকরণ সংগ্রহ করা হয়েছিল।তবে একথাও ঠিক যে, ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে কেশব সেনের বালকবন্ধু প্রকাশিত হওয়ার পর মৌলিক শিশুসাহিত্যের সূত্রপাত হয়। তার আগে বিদ্যাসাগর কিংবা মদনমােহন
তর্কালঙ্কার প্রমুখেরা যতটুকু কাজ করেছেন তা শিশুকিশাের শিক্ষায়তনের প্রয়ােজনে।
পঞ্চতন্ত্র কথাসরিৎসাগর থেকে শুরু করে মিশনারিদের আগমনে ফোর্ট উইলিয়ম
কলেজের গদ্যচর্চার মধ্যেই শিশুসাহিত্যের খোঁজ পাওয়া যায়। আশা গঙ্গোপাধ্যায় বাংলার ব্রতকথা-র ছড়ায় শিশুসাহিত্য অন্বেষণ করেছেন। স্বল্প পরিসরে হলেও (মাত্র বারােটি পৃষ্ঠায়) তিনি নিখুঁত ভাবে ইউরােপ আমেরিকার শিশুসাহিত্যের বর্ণনা দিয়েছেন। শিশুসাহিত্যের তত্ত্ব প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য এখানে উল্লেখ করা অবশ্যই প্রাসঙ্গিক। তিনি লিখেছেন :
যথার্থ শিশুসাহিত্য বলিতে তাহাই বুঝিব, যাহা সর্ব বয়সের নরনারীর কাছেই একটি রসাস্বাদ আনিয়া দেয়, বয়সের পার্থক্য অনুসারে আস্বাদনের ব্যাপারে কিছু বিভিন্নতা
ঘটিতে পারে কিন্তু সর্বস্তরের মানুষকে আনন্দ দান করিবার মত শিল্পগুণ তাহাতে থাকিবে
শিশুসাহিত্য নিয়ে কোনাে কাজ করতে গেলে বা শিশুসাহিত্য বিষয়ক কোনাে প্রবন্ধ
লিখতে গেলে কয়েকটি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখা প্রয়ােজন। যেমন—শিশুসাহিত্য কোন বিষয় নিয়ে রচিত হবে, কোন বিষয় বা সমস্যা তাতে থাকবে না, অথবা কোনবিষয়ের উপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া প্রয়ােজন। বয়স্কদের জন্য রচিত সাহিত্য এবংশিশুসাহিত্যের মূল পার্থক্যটা কোথায়। শিশুসাহিত্যে শিশুর স্থান কোন পর্যায়ে। শুধু কি নীতিবােধ দিয়ে শিশু-শিক্ষাগ্রন্থ রচিত হবে, না তার সঙ্গে থাকবে খুশির অপর্যাপ্ত উপকরণ? ছাটোদের জন্য লেখার বিষয় ও আঙ্গিক, শিশুসাহিত্যে কল্পনা আর বাস্তবের মেলবন্ধন কতটা থাকবে, শিশুসাহিত্যে বিজ্ঞানমনস্কতার প্রয়ােজনীয়তা বা খেলাধুলার ভূমিকা, আধুনিক শিশুসাহিত্যে রূপকথার গুরুত্ব ইত্যাদি বিষয় শিশুসাহিত্যেরউল্লেখযােগ্য দিক। হাসির গল্প, মজার গল্প কিংবা বিজ্ঞান ফ্যান্টাসিতে রুচিসম্মত রং মিশিয়ে যে শিশুসাহিত্য রচিত হতে পারে তা জানা অবশ্যই দরকার।যুগ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শিশুসাহিত্যের বিষয়বস্তু আর প্রকাশভঙ্গির পরিবর্তনের কথাও মনে রাখা প্রয়ােজন। সেইকথা মাথায় রেখে ছােটোদের জন্য অনেকেই শিশুসাহিত্যের পটভূমি তৈরি করেছেন, ছােটোদের মন-মানসিকতার প্রেক্ষাপটে সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন বা প্রাইমার লিখেছেন।সাঁঝবেলার আলাে-আঁধারি দোলনায় দোল খাচ্ছে এক শিশু। নাটকীয় ভঙ্গিমাতে গল্প শােনাচ্ছে দিদা-দাদু-ঠাকুমার কেউ একজন।হয়তাে শােনাচ্ছে নিজের জীবনের কোন সত্যি ঘটনা কিংবা রূপকথা।
বাংলা শিশুসাহিত্যের অফুরান ভাণ্ডার থেকে চার শতাধিক সাহিত্যিক ও তাদের সাহিত্যকর্ম নিয়ে এই প্রথম লিপিবদ্ধ হল বিগত দশ বছরের বিশ্বস্ত ইতিহাস।কবি ঈশ্বর গুপ্ত (১৮১২) থেকে শুরু করে বর্তমান কাল (২০১৬) পর্যন্ত অবিস্মরণীয়, স্মরণীয় ও বিস্মৃতপ্রায় শিশুসাহিত্যিকদের পাশাপাশি রয়েছেন নবীন-প্রবীণ সমসাময়িক লেখকেরাও। ত্রিপুরা-অসমের ছোটোদের সাহিত্য ও সাহিত্যিকদের বর্ণময় জীবনের সৃজনকথাও ধৃত হয়েছে এই আকরগ্রন্থে।কবি-প্রাবন্ধিক আনসার উল হকের দশকব্যাপী গবেষণার ফসল
শিশুসাহিত্যের এই ইতিহাস বাঙালির গর্বের ইতিহাসে অমূল্য সংযোজন।