Description
এই বইয়ের লেখিকা ড. বাণী দাশের বইয়ের শুরু উনবিংশ-বিংশ শতকের দৃষ্টিকোণ থেকে রামায়ণের কাল ও ঐতিহাসিকতার বিচার নিয়ে। যাঁর স্বতন্ত্র মত নেই, তিনি মুনি নন।কেউ বলেন রামায়ণ বুদ্ধদেবের আবির্ভাবের পরে লেখা। কেউ বা বলেন,রামায়ণ মহাভারতের পরে লেখা। যাঁরা ট্রাডিশনে বিশ্বাস করেন, তাঁরা বলেন-রামায়ণ ত্রেতা যুগে রচিত হয়েছিল। ইন্দোনেশিয়ার রামায়ণে য়িহুদী,খ্রীষ্টান- ইসলাম ধর্মীয় মিথের protagonist আদম একটি চরিত্র। কেউ।
বলেছিলেন—শ্রীরামচন্দ্র তাে কেবল মানুষ। তাই অধ্যাত্ম রামায়ণে স্বয়ং মহেশ্বর রামকথা নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বলে, রামের ঐশ্বরিক দিকটি আমাদের প্রত্যক্ষীভূত করলেন। তেমনি ঊনবিংশ শতকের বিজ্ঞান-মনস্কতা রামের গল্পে আর্যদের দক্ষিণাপথ এবং মিথিলা পর্যন্ত শুধু রাজ্যবিস্তারের কথাই বললেন না—আর্যরা নাকি
কৃষিসভ্যতাকে ভারতবর্ষের নানা দিকে ছড়িয়ে দিয়েছিল। এ কাহিনী সাহেবদের মন-গড়া।।
| সাহেবরা এদেশে colony তৈরী করেছে; তারা এদেশে industry নিয়ে এসেছে। তারা নিজেদের মূর্তি রামচরিতে আবিষ্কার করেছে। তাদের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে তারা শ্রীরামচন্দ্রের কাহিনীর অলৌকিকত্ব মেনে নিতে পারে নি। তাই
তাদের ধারণা, দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ কাণ্ড পর্যন্ত, রামায়ণের কাহিনীর একটি স্তর।প্রথম এবং সপ্তম কাণ্ডে যেহেতু রামের অলৌকিকত্বের কথা আছে, সেই হেতু,ওরা প্রক্ষিপ্ত,—রামকাহিনীর অন্য স্তর। কিন্তু আমরা যদি আরেকটু কাছ থেকে
দেখি, তাহলে দেখব-বাল্মিকী রামায়ণে, দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম সর্গ পর্যন্ত একটা টেনশান আছে। একদিকে সুমিত্রা, শরভঙ্গ ঋষি, সুতীক্ষ্ণ ঋষি এঁরা যখন রামকে দেবতা বলে mythicise করছেন, তখন অন্যদিকে রাম স্বয়ং নিজের ঐশ্বরিক মহিমাকে বারংবার অস্বীকার করছেন। লঙ্কা থেকে উদ্ধারের পর সীতাকে যখন
অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়, তখন স্বয়ং ব্রহ্মা ইন্দ্রাদি দেবতা সমভিব্যাহারে শ্রীরামচন্দ্রের কাছে এসে বললেন—আপনি তাে স্বয়ং নারায়ণ, ইনি লক্ষ্মী আপনার স্ত্রী। আপনিসীতা/লক্ষ্মীদেবীর অগ্নিপরীক্ষা নেবেন না। তখন রাম বললেন— আমি নিজেকে দশরথাত্মজ রামচন্দ্র বলেই জানি। আমি মানুষ। আমার বাড়ী তাে অযােধ্যায়। মানুষ মাত্রেই যখন নিজেকে অতিমানব বলে প্রতিপন্ন করতে চায়, তখন, একমাত্র পরম ব্রহ্ম রামই নিজেকে সর্বথা মানুষ বলে প্রতিপন্ন করে গেছেন। অথচ লক্ষ্মণ যখন বন গমনের জন্যে বিদায় নিতে এসেছেন তখন সুমিত্রা বলছেন—বাবা, রামযেখানে সেখানেই অযােধ্যা, এ অযােধ্যা সত্য নয়। সুতরাং রামকে তুমি সব সময়ে ছায়ার মতাে অনুসরণ করবে। বনপ্রদেশে এক ঋষি রাম আসছেন শুনে নিজের স্বর্গগমন মুলতুবি রাখলেন। রামের সঙ্গে দেখা না করে তিনি কোথাও যাবেন না।রাম আসতেই তিনি বললেন—বাবা, তুমি আমার তপস্যালব্ধ সমস্ত লােক গ্রহণ করাে। সকল পূজো তাে শ্রীবিষ্ণুকে সমর্পণ করাই রীতি। রাম নিজের ঐশ্বরিক সত্ত্বাকে অস্বীকার করে দৃঢ়ভাবে বললেন—আমি স্বােপার্জিত বস্তু ছাড়া কিছু গ্রহণ করি না। শেষ পর্যন্ত আত্মারাম ঋষি রামের সমুখে অগ্নিকুণ্ডে আত্মাহুতি দিলেন।তার কাছে রাম সর্বেশ্বরেশ্বর—মৃত্যুকালে চোখের সামনে যে উপস্থিত!সপ্তমকাণ্ডে ঐ রামের যুদ্ধজয়ের আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা করলেন ঋষি অগস্ত্য। তাই সপ্তম কাণ্ডে
অলৌকিকত্ব আছে। একই লেখক বিভিন্ন perspective থেকে একটি ঘটনাকে দেখতে পারেন। ফকনারের একটি উপন্যাসে একাধিক পাত্রপাত্রীর একই কাহিনীকে একাধিকবার narrate করেছি। তাতে কাহিনীটি একাধিক মাত্রা পেয়েছে। ঋষি অগস্ত্যের দৃষ্টি আমাদের time-space এ সীমাবদ্ধ নয়। তাই তিনি ঐ একই রামকাহিনীকে আধ্যাত্মিক মাত্রা দিয়েছেন।
Be the first to review “বাংলা সাহিত্য ও বাঙালীর জাতীয় জীবনে রামায়ণ - ড. বাণী দাশ”
You must be logged in to post a comment.