Description
“এমন আসর-জমানাে ভাষা এবং ভঙ্গী
এবং কৌতকের আভায় জ্বল জ্বল করা
বর্ণনা-লহরী বাংলা সাহিত্যে আর
কারো লেখনীর মুখে ঝরতে দেখিনি…
.. আমাকে মনে মনে কবুল করতে
হােলাে আপনার লেখনী আমার
সর্বাঙ্গীণ লেখনীকে অনেক দূর এগিয়ে
জিতেছে…” লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ
বন্ধু চারুচন্দ্র দত্তকে তার ‘পুরানাে কথা’
পড়ে | বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ
সেই বইটির তিন খণ্ড একত্রে পুনর্মুদ্রণ
এবার। পাঠক এতে পাবেন এক বিগত
সময়ের জলছবি, বহু বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্বের
অন্তরঙ্গ চিত্র, স্বদেশী যুগের বিপ্লব-
আন্দোলনের এক গােপন অধ্যায়,
আই.সি.এস. হওয়ার সুত্রে চারুচন্দ্রের
প্রবাস জীবনের এবং স্বদেশে
কর্মজীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতার অতি
উপাদেয় সরস বর্ণনা। রবীন্দ্রনাথ,
শ্ৰীঅরবিন্দ, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়,
দাদাভাই নৌরজী, সখারাম গণেশ
দেউস্কর, বারীন্দ্র কুমার ঘােষ, স্বামী
বিবেকানন্দ, রাজা সুবােধ মল্লিক,
সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী এবং আরাে
অনেক ব্যক্তিত্বের সমাবেশ | একদিকে
তদানীন্তন বৃটিশ সরকারের বড়
কর্তাদের সঙ্গে স্বদেশী বিপ্লবী আন্দোলন
সম্বন্ধে নির্ভীক সত্য ভাষণ, অন্যদিকে
দেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষের জীবন ও
চরিত্রের মর্মভেদী উম্মােচন।স্বদেশী যুগ
থেকে তার সখা ও গুরু শ্রীঅরবিন্দের
স্নিগ্ধ সঙ্গস্মৃতি এই বই-এর এক উজ্জ্বল
অধ্যায়; সেই সঙ্গে জীবনের শেষ পর্বে
পণ্ডিচেরী আশ্রমে শ্রীঅরবিন্দ ও
শ্রীমায়ের সঙ্গে তার অন্তরঙ্গ সান্নিধ্যের
এক মরমী স্মৃতিচিত্রণ।। এককথায়,
বিগত যুগের ইতিহাস, ব্যক্তিত্ব ও
ঘটনাবলীর এক অনন্য রসাল
পদাবলী।চারুচন্দ্রের আরেক পরিচয় বিভিন্ন ধরনের রচনায় তিনি একজন সিদ্ধহস্ত লেখক।
১৯২৮ খ্রঃ জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে ভারতীয় কংগ্রেসের ইতিহাস রচনার ভার
তাঁর উপর পড়েছিল। এই ইতিহাসের তিনিই প্রথম রচয়িতা। রচনাটি আমাদের নজরে
আসেনি। এ ছাড়া, ১৯৪০ খ্রীঃ কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে রামদাস ও শিবাজী’
নামে যে লিখিত বক্তৃতা দেন, তা তৎকালীন চিন্তাবিদদের আকৃষ্ট করেছিল। হয়তাে তার
সব কথা বর্তমান ঐতিহাসিকরা মানবেন না, কিন্তু যেটা সকলকেই মানতে হবে তা হল
চারুচন্দ্রের নিজস্ব চিন্তাধারা ও দৃষ্টিভঙ্গি এবং ইতিহাসকে রসের ভিয়ানে পাক করে
কথকের মত পরিবেশন করার সহজাত শক্তি – যা এযুগে দুর্লভ। এরপর আসে তার
গল্পগ্রন্থগুলির কথা। এদিক থেকে তার কৃষ্ণরাও’ (প্রকাশক : গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় অ্যান্ড
সন) একটি স্মরণীয় বই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পরিচয়’পত্রিকায় এটির একটি সুন্দরসমালােচনা
লেখেন। পরিচয়’ ১৩৪০, বৈশাখ সংখ্যায় রবীন্দ্রনাথ লিখছেন : “চারুচন্দ্র দত্তের।
“কৃষ্ণরাও” বইখানা হাতে এল। লেখক মজলিষি মানুষ, তার উপরে দূরপ্রদেশের
অভিজ্ঞতায় তাঁর স্মৃতি-ভাণ্ডার ভরা। যা দেখেছেন তার মধ্যে সমস্ত মন দিয়ে প্রবেশ
করেচেন। বােঝা যায় মারাঠায় তিনি ঘরের লােক ছিলেন। এই ঘরের লােক বলার শক্তি
সকলের নেই। যাদের আছে তাদের কথা বলবার শক্তি কম। চারুবাবু বিদেশের
লােকসমাজের রস পেয়েছেন এবং গল্পে সে রস দিয়েচেন ঢেলে। তার এই কথাগুলিতে
দূর দেশ ও দূরকালের স্বাদ চমৎকার মিলে গেছে। একেই বলে খাঁটি গল্প। এইরকম গল্প
পথিকদের কাছে শােনা যেতে পারে পথের ধারের আসরে।” ‘দুনিয়াদারী’ (বিশ্বভারতী,
আশ্বিন, ১৩৪৩) আরাে একটি উল্লেখযােগ্য গল্পগ্রন্থ, যেটিও রবীন্দ্রনাথের প্রশংসা
কুড়িয়েছিল, তার লিখিত প্রমাণ রবীন্দ্রনাথের চিঠিতেই রয়েছে : “আপনি প্রকৃত মুসাফের।
মন আপনার হাল্কা হয়ে ঘুরে বেড়ায় অভিজ্ঞতার রাজ্যে। তারপরে আপনি খুসি হয়ে
কথা বলে যান শ্রোতার আসরে। এই যে দেখবার খুসি এবং বলবার খুসি এটা আমাদের
সাহিত্যিক মণ্ডলে দুর্লভ তার কারণে শুভ দৈবক্রমে এটা যদি একান্ত সহজ না হয়
তবে এটা একান্ত দুরূহ।
Be the first to review “পুরানো কথা (তিন খন্ড একত্রে) শ্রীচারুচন্দ্র দত্ত সংকলন,সম্পাদনা ও ভূমিকা: সুপ্রিয় ভট্টাচার্য”
You must be logged in to post a comment.