Description
“লিপিমালা’ পুস্তক শ্রীরামপুরে কাষ্ঠনির্মিত মুদ্রাযন্ত্রে মুদ্রিত হয়েছিল। বিলাত থেকে আনীত এই মুদ্রা যন্ত্রটি কলকাতায় নিলামে বিক্রি হয়েছিল। বাংলায় বাইবেল অনুবাদ ছাপাবার ইচ্ছায় উডনি সাহেব এটি ক্রয় করেছিলেন মাত্র ৪৬ পাউণ্ডে। তিনি এটি কেরীকে দান করেন। মুদ্রাকর ওয়ার্ডের তত্ত্বাবধানে এবং কলকাতা থেকে ক্রীত হরফ সাজিয়ে কেরীর উদ্যোগে ও রামরাম বসুর সহায়তায় বাংলায় বাইবেল অনুবাদ ‘ধৰ্ম্মপুস্তক’ ১৮০১ সালে প্রকাশিত
হল।’ধৰ্ম্মপুস্তক’ (১৮০২) ও ‘লিপিমালা’ পুস্তক’ (১৮০২) দ্বয়ের হরফের উচ্চতা একই (৩ মিমি.) এবং হরফের আকারও এক।
‘লিপিমালা’ গ্রন্থের ৫ পৃষ্ঠা ব্যাপী ভূমিকা আছে। গ্রন্থারম্ভে সিদ্ধিদাতা পরম ব্রহ্মকে লেখক স্মরণ করেছেন। ভূমিকার শেষে ৬ পঙক্তির পদ্য আছে। শেষ দুই পঙক্তিতে ভাদ্র মাসে ১১৯৫
বর্ষে (১৮০২) গ্রন্থ রচয়িতার নাম আছে :
শতাদিত্য বসু বর্ষ পশু শ্রেষ্ঠ মাস।
পরম আনন্দে রাম করিল প্রকাশ।
মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে রচয়িতা ভণিতায় গ্রন্থ রচনার কাল ও আত্মপরিচয় দিতেন। সেই রীতিটি রামরাম বসু কিছুটা বজায়।
রেখেছেন। তার প্রথম গ্রন্থ ‘রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত্র’ (১৮০১)-এর প্রারম্ভের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে তিনি আত্মপরিচয় জ্ঞাপনের কিছুটা ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তিনি নিজেকে রাজা প্রতাপাদিত্যের স্বজাতি ও উত্তর পুরুষের একজন হয়ে যে রাজার বিবরণ অধিক জ্ঞাত
ছিলেন তা জানাতে দ্বিধা করেন নি।
লিপিমালা প্রথম বাংলা পত্রসাহিত্য। বাংলা
অঙ্ক পুস্তকের আদি নমুনা আছে ১৫ পৃষ্ঠার
অঙ্কমালা’-য়। মধ্যযুগে পুথিতে রচিত মুকুন্দর ‘চন্ডীমঙ্গল’ কাব্যের প্রথম মুদ্রিত রূপ লিপিমালায় আছে। পুথিতে রচিত চৈতন্যজীবনী কাব্যের খসড়া ও আদি মুদ্রিত রূপও এই গ্রন্থে আছে। বহুমুখী জ্ঞান-কোষের প্রথম বাংলা রচনা লিপিমালা।
‘এটি স্হির কথা, বাঙ্গালা গদ্যের প্রাচীনতর
নমুনা যতই থাকুক না কেন, রাম বসুই
আধনিক গদ্য সাহিত্যের স্রষ্টা। তাঁহার পূর্বে
বাঙ্গালা ভাষায় আধুনিক ছন্দের গদ্যে
প্রতাপাদিত্যচরিতের মত একখানি
সৰ্ব্বাঙ্গসুন্দর পুস্তক কেহ লেখেন নাই।…।
– রাম বসুর
লিপিমালাও একখানি উৎকৃষ্ট গ্রন্থ।
– দীনেশচন্দ্র সেন
‘বাঙলা সাহিত্যের ইতিহাসে অনেক মহারথীর সঙ্গে নিতান্ত পদাতিক রামরাম বসুর স্থান হইয়াছে। কিন্তু কোন্ বিচারের মাপকাঠিতে ? তাঁহার রচিত রাজা প্রতাপাদিত্য-চরিত্র বাঙলা অক্ষরে মুদ্রিত বাঙালী রচিত প্রথম মৌলিক গদ্যগ্রন্থ। ইহা সামান্য সাফল্য নয়, এক হিসাবে সফলতার চরম।…
…পথভ্রষ্ট রাম বসু মিশনারীদের সঙ্গে না জুটে ওয়ারেন হেস্টিংস ও ক্লাইভের দলে ভিড়লে বাংলা দেশের অভিজাত সমাজ আর একটা রাজা-মহারাজার পদবীগৌরব লাভ করত। কিন্তু প্রতিভা এমন শক্তি যে, পথভ্রষ্ট হলেও পথ কেটে নিতে ভােলে না, রাম বসুর
প্রতিভাও পথ কেটে নিয়েছে—বাংলা গদ্য রচনারীতির পথ।
– প্রমথনাথ বিশী
রামরাম বসু-র (১৭৬০-১৮১৩) জন্মস্থান চুঁচুড়ায় এক কায়স্থ বংশে। তিনি ১৭৮৭ সালে মুন্সীপদে নিযুক্ত হন। তিনি টমাস ও কেরি সাহেবকে বাংলা শিখিয়েছিলেন।বাইবেলের সর্বপ্রথম বঙ্গানুবাদে রামরাম বসুর সহায়তা সর্বাধিক ছিল। যিশু সম্বন্ধে বাংলা ভাষায় বসু মহাশয় যে গানটি রচনা করেন সেটির ইংরেজি তর্জমা প্রায় অর্ধ শতকব্যাপী মিশনারি পর্বে বাংলার গীর্জাগুলিতে ধ্বনিত হয়েছে।‘রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত্র’ (১৮০১) ও ‘লিপিমালা’ (১৮০২)—এই দুখানি মৌলিক বাংলা গদ্য গ্রন্থের রচয়িতা এবং বাংলা গদ্যরীতির দিশারীরূপে বাংলা সাহিত্যে তাঁর আসন চিরস্থায়ী।
Be the first to review “লিপিমালা - রামরাম বসু”
You must be logged in to post a comment.