সাঁওতালি সাহিত্যের ইতিহাস-পরিমল হেমব্রম

Call / WhatsApp : +91 9563646472

To purchase / enquire about the book, send a WhatsApp message or call between 11 AM and 11 PM.

Description

স্বাধীনােত্তর ভারতবর্ষে সাঁওতালি লিখিত সাহিত্যচর্চার ক্রম বজায় রাখা দুষ্কর, কেননা পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা,বিহার, ঝাড়খণ্ড, আসাম ও বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড জুড়ে সাঁওতাল অধ্যুষিত অঞ্চলে সাঁওতালি সাহিত্য ধীর গতিতে বিকাশ লাভ করে। এই সুবিশাল অঞ্চলের সাহিত্যচর্চার সঠিক ক্রম ও তথ্য সংগ্রহ করা দুরুহ ব্যাপার। সর্বোপরি রয়েছে লিপিগত প্রভেদ যা ইতিহাস রচনায় বাধা সৃষ্টি করে। তথ্যের ধারাবাহিক আলােচনাও কোথাও লিখিত
আকারে নেই। কোনাে কোনাে গ্রন্থে বা পত্র-পত্রিকায় বিচ্ছিন্নভাবে কিছু তথ্য পাওয়া যায়,
তাও আবার কোথাও রয়েছে অসম্পূর্ণ তথ্য, কোথাও হয়তাে তথ্যের সত্যতা নিয়ে সংশয়
দেখা দেয়, কোথাও বা মৌখিক তথ্যের উপর নির্ভর করতে হয়। এই রকম পরিস্থিতিতে
ব্যক্তিগত সংগ্রহের ভিত্তিতে “সাঁওতালি সাহিত্যের ইতিহাস রচনা করা হলাে, যদিও এতে সাহিত্যের ইতিহাস রচনার শর্তাবলী বহু ক্ষেত্রেই অনুসরণ করা সম্ভব হয়নি। এতে মৌখিক সাহিত্য থেকে শুরু করে লিখিত সাহিত্যের পথ ধরে একবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভিক ছয় বছর (২০০৬) পর্যন্ত যথাসম্ভব ক্রমকে বজায় রেখে সাঁওতালি সাহিত্যের সম্পূর্ণপরিচয় তুলে ধরা হলাে।
সাঁওতালি সাহিত্যের ইতিহাসকে খ্রীষ্টাব্দের হিসেবে চিহ্নিতকরণ করা খুবই কঠিন তাই যুগ বিভাগের গণ্ডী নির্ধারণও কঠিন। তবু তর্কের খাতিরে সাঁওতালি মৌখিক সাহিত্যকে যদি আদিযুগ ধরা হয় তাহলে দেখা যাবে খ্রীষ্টাব্দের
হিসেবে মৌখিক সাহিত্যকে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না কেন না মৌখিক সাহিত্যের প্রাচীনত্ব সম্পর্কে কাল নির্ধারণ করা কঠিন। প্রামাণ্য তথ্যেরও অভাব রয়েছে।অনুরূপ ভাবে মধ্য ও আধুনিক যুগ সম্পর্কেও খ্রীষ্টাব্দের হিসেব প্রযােজ্য নয়।
অন্য ভাষার সাহিত্যকে খ্রীষ্টাব্দের সীমারেখায় যে ভাবে যুগ বিভাগকে চিহ্নিত করা হয়েছে, সাঁওতালি সাহিত্যকে ঐ ভাবে চিহ্নিত করণে সামঞ্জস্যের অভাব প্রকট হয়। সাঁওতালি সাহিত্যের মিশনারী আমলকে মধ্য যুগ ধরলে তা ঊনবিংশ শতাব্দীকে বােঝায়, পাশাপাশি লক্ষণীয় বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে মধ্যযুগের সীমারেখা ত্রয়ােদশ থেকে সপ্তদশ শতাব্দী এবং আধুনিক যুগের শুরু অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে। সাঁওতালির ক্ষেত্রে আধুনিক যুগের শুরু বিংশ শতাব্দীর তিরিশ দশক থেকে। সুতরাং খ্রীষ্টাব্দের হিসেব অনুযায়ী যুগ বিভাজনে না গিয়ে সাঁওতালি
সাহিত্যের ধারাবাহিকতাকে পর্ব অনুযায়ী বিভাজন যুক্তিযুক্ত।সাঁওতালি সাহিত্যের ধারাবাহিকতাকে বা ইতিহাসকে তিনটি পর্বে ভাগ করা যায়।
(১) মৌখিক সাহিত্য।
(২) মিশনারীদের অবদান বা সংগৃহীত সাহিত্য।
(৩) সাঁওতালদের স্বচেষ্টায় লিখিত সাহিত্যের ধারা।
লিখিত সাহিত্যের এই ধারাকে আবার পাঁচটি উপ-পর্বে ভাগ করা যায়।
ঊনবিংশ শতাব্দীর নব্বই দশক থেকে বলা যায় স্বচেষ্টায় লিখিত সাহিত্যের সূচনা। ১৮৯৩ সাল থেকে “হড় হপনরেন পেড়া” পত্রিকার প্রকাশ শুরু হয়।এটিই সাঁওতালি ভাষায় প্রকাশিত প্রথম পত্রিকা। অপর দিকে, ১৮৯৫ সালে মাঝি
রামদাস টুডুর ‘খেরওয়াল বংশাঃ ধরম পুথি’ প্রকাশিত হয়। আদিপর্ব বা প্রতিষ্ঠা পর্বের সূচনা উপরােক্ত দুই মাইল স্টোন থেকে ধরে এর বিস্তার ঘটেছে বিংশ শতাব্দীর কুড়ি দশক পর্যন্ত।বিংশ শতাব্দীর তিরিশ দশকে আবির্ভূত হন সাঁওতালি সাহিত্যের তিন মহারথী—পাউল জুঝৗর সরেন, সাধু রামাদ মুরমু ও পন্ডিত রঘুনাথ মুরমু। এঁদের
কালজয়ী সৃষ্টির মধ্য দিয়েই শুরু হয় সাঁওতালি আধুনিক পর্বের যাত্রাপথ এবং বহু প্রথিতযশা কবি, সাহিত্যিকের আগমনে এই পর্বের সাহিত্যের ধারা নিরবচ্ছিন্ন ভাবে এগিয়ে যায় বিংশ শতাব্দীর সত্তর দশক পর্যন্ত।

Be the first to review “সাঁওতালি সাহিত্যের ইতিহাস-পরিমল হেমব্রম”