Description
সাহিত্যের ইতিহাসে আজও কামতা কোচ রাজদরবারের সাহিত্যচর্চার ইতিহাস স্থান করে নিতে পারেনি।যদিও এই কোচ-রাজদরবারের
একটি চিঠি আদি বাংলা গদ্য সাহিত্যের প্রথম নিদর্শন হিসেবে ইতিহাসবেত্তাদের কাছে চিহ্নিত
হয়ে আছে। চতুর্দশ-পঞ্চদশ শতক থেকে যে সাহিত্যচর্চা একসময় শুরু হয়েছিল কোচ- রাজদরবারে তার ধারাবাহিকতা ছিল বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত। এই বিশাল
অধ্যায়ে সাহিত্যচর্চার ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে ‘সাহিত্যের ইতিহাসে কোচ-রাজদরবার’ বইতে।
কামতার সাহিত্যচর্চার ইতিহাসে চতুর্দশ শতকের প্রথমার্ধ থেকে পঞ্চদশ শতকের সময় পর্যন্ত
যে দুজন রাজা দুর্লভ নারায়ণ এবং তার পুত্র ইন্দ্র নারায়ণ রাজত্ব করেছিলেন, সেই সময় থেকেই
কামতা-রাজদরবারের সাহিত্য চর্চার ইতিহাস শুরু হয়েছিল বলা চলে। এই সময়ে এই রাজাদেররাজত্বকাল বিশেষতঃ কোচ-রাজা বিশ্বসিংহের সময়ে হরিহর বিপ্র ও কবিরত্ন সরস্বতী কাব্যচর্চা করে গেছেন। একসময় হুসেন শাহ এই কামতা রাজ্য (কোচ-রাজ্য) জয় করতে পারলেও বেশিদিন অধিকারে রাখতে পারেননি। নীলাম্বরের (কান্তেশ্বরের) সাধের নগরটি ধ্বংস করলেও অচিরেই পশ্চিম কামরূপে বিশ্বসিংহ কামতানগর তথা কোচ রাজ্য স্থাপন করেন। বিশ্বসিংহ যেমন দুই পুত্রকে বারাণসীর ব্রহ্মানন্দ বিশারদের কাছে বিদ্যাশিক্ষা এবং সংস্কৃতচর্চার জন্যে পাঠান, তেমনি মিথিলা, কনৌজ, কাশী, শ্রীক্ষেত্র থেকে ব্রাহ্মণ পণ্ডিতদের নিয়ে এসে ধর্মচর্চা এবং সাহিত্য সাধনার পীঠস্থান করে গড়ে তােলেন। বিশ্বসিংহ-পুত্র নর নারায়ণ, এবং শুক্ৰধ্বজ (সমর সিংহ বা চিলা রায়) পাসী ও সংস্কৃত সাহিত্যেও পারদর্শী হয়ে ওঠেন। এক সময় এই কোচবিহার থেকেই সংস্কৃত ও বাংলা ভাষা, কামরূপ, নেপাল, ভূটান, দরং, কাছাড়, জয়ন্তিয়া, মণিপুর, আরাকান-ব্রহ্মদেশ পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছিল। কোচবিহারের মহারাজা নর নারায়ণের সময় যে সকল মুদ্রা পাওয়া গিয়েছে সেই সকল মুদ্রায় যেমন একদিকে বাংলা বর্ণলিপি, তেমনি অন্যদিকে পশ্চিম ভারতীয়
মৈথিলী নাগরী লিপির বাংলা হরফের সন্ধান ভিন্ন ভিন্ন রূপে পাওয়া গিয়েছে। সংস্কৃত চর্চা প্রথম
দিকে নেপাল বা তিব্বত অঞ্চলে শুরু হলেও এই কামতা-কোচবিহারের রাজদরবারে অর্থাৎ
কোচ-রাজদরবারে চতুর্দশ-পঞ্চদশ শতক থেকেই সংস্কৃত, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চার পরিবেশ
সর্বপ্রথম দেখা যায়। অথচ আমাদের পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাস রচনাকারীরা কোচ-রাজদরবারের পৃষ্ঠপােষকতায় রচিত বাংলা, ইংরেজি ও সংস্কৃত গ্রন্থ বা পুঁথিকে এখনও সাহিত্যের ইতিহাসে স্থান দেবার যােগ্য বিবেচনা করার সুযােগ পাননি। কামতা-কোচ-রাজদরবারে রচিত বাংলা সাহিত্য আজও মূল বাংলা সাহিত্যের পঙক্তিভুক্ত হতে পারেনি। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগ পর্যন্ত এই অঞ্চলের অধিবাসীরা অর্থাৎ কোচবিহারের অধিবাসীগণ কোচবিহারকে ‘কামরূপ ভূমি বলেই জানতাে। তাই যে সকল কবি কবিতা বা কাব্যগ্রন্থ রচনা করে গেছেন তারা তাদের গ্রন্থে কোচবিহারকে
‘কামরূপ দেশ’ বলেই ভণিতায় নির্দ্বিধায় উল্লেখ করতেন। অসমের (পূর্ব কামরূপের) দরং,বিজনী,
কাছাড়, বেলতলা প্রভৃতি স্থানে যে রাজবংশ দেখা যায় সেই রাজবংশ কোচবিহারের রাজাদেরই বংশাবলী। এই সকল এলাকা একসময় বিশ্বসিংহ এবং নর নারায়ণের রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
Be the first to review “সাহিত্যের ইতিহাসে কোচ-রাজদরবার- রনজিৎ দেব”
You must be logged in to post a comment.