৫০ টি বিলুপ্ত প্রাণীর কথা এই বইটিতে বলা আছে (পাখি-২৫,স্তন্যপায়-১৭,সরীসৃপ-৪,উভচর-১,মাছ-৩)।যেমন ফাঙ্কদ্বীপের আকপাখি (Great Auk of Funk Island) যার বৈজ্ঞানিক নাম: অ্যালকা ইমপেনিস্(Alca impennis),শ্রেণী:পক্ষী, গোত্র: অ্যালসিডি,বসতি অঞ্চল ছিল,ফ্রাঙ্কদ্বীপ(উত্তর আমেরিকা), বিলুপ্তিকাল:১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দ। এই আটকপাখি ডাঙাতে হাঁটতে পারত দুপায়ে আবার ইচ্ছা হলে জলেও সাঁতার দিত তার খুশি মতো। আন্টার্টিকার প্রসিদ্ধ পেঙ্গুইনের সঙ্গে আকপাখির মিল ও অমিল অনেক। এদের দেহের সব লক্ষণই ছিল জলে বসবাসের উপযোগী।এই আকপাখিদের চারণভূমি ছিল উত্তর গোলার্ধে। তাদের পেটের রং ছিল সাদা আর পিঠের রঙ ছিল ঘোর কালো। ঠোঁট ছিলো বেটে ও পুরু;সেই সঙ্গে ঠোঁটের ডগাটা ছিল নিচের দিকে একটু বাঁকা।ঠোঁটের ওপর সরু সরু দাগ। সব মিলিয়ে আকপাখি ছিল বড় অনুপম।এই পাখি আকারেও ছিল খুব বড়। প্রায় ৬০-৭০সেন্টিমিটার( ২-২.৫ফুট) এর মত।বুকের দিকে সাদা এবং পিঠ ধূসর-কালো। আবার চোখের কাছটা সাদা।এই পাখির বড় কদরের জিনিস হল তাদের পালক;তা যেমন নরম তেমনই প্রশস্ত।এই পাখির নমনীয় পালকই একদিন তার অন্তিমশয্যা গড়ে তুলল।নিউ ফাউন্ডল্যান্ড সাগরের কাছেই এই দ্বীপপুঞ্জের অবস্থান।এই পাখিকে যাঁরা প্রত্যক্ষ করেছেন তাঁদের বিবরণ বড় বিচিত্র।উনিশ শতকের গোড়ার দিকেই এই দ্বীপকে কাছ থেকে দেখেছিলেন নাবিক গ্রিম। তিনি ওই দ্বীপের কাছে এসে দ্বীপটিকে ভালোভাবে নিরীক্ষণ করেছিলেন। তারপর ওই দ্বীপ ও তার প্রাণী- সম্পদ নিয়ে তিনি এক বই লেখেন। তার নাম দিয়েছিলেন আক পাখির ইতিবৃত্ত ও পরিণতি।১৮৪৪ সালের পর থেকে ওই ফাঙ্কদ্বীপে আর কোন আকপাখির সন্ধান পাওয়া যায়নি। সাগরদ্বীপের যত্রতত্র ছড়ানো ছিল হাজার হাজার পাখির কঙ্কাল – তাদের মাথা ও ডিমের খোলা।উত্তর আমেরিকা আবিষ্কারের সঙ্গে বিশেষভাবে জড়িত ওই আকপাখির অস্তিত্ব আবিষ্কারক পর্যটকরাই প্রথম জানান যে, ওই পাখিরা পরিযানে় বের হয়ে পশ্চিম ভূখন্ডে আসে। ইতিহাসের তথ্য মতে ১৪৯৭ সাল থেকে ফাঙ্কদ্বীপে আকপাখির শিকার করে আসছে নিউফাউন্ডল্যান্ডের অধিবাসীরা। ফরাসি নৌবহর ‘গ্র্যান্ডব্যাঙ্কে’কর্ড মাছ শিকারে এসে খাদ্যান্বেষণে নৌ-যাত্রীরা ওই দ্বীপে এসে আকপাখি শিকার করে নিয়ে যেত।১৫৩৪ জ্যাক কার্টার ওই পক্ষীদ্বীপে (নিউফাউন্ডল্যান্ড)এসেছিলেন। তাঁর নৌ-যাত্রীরা আধ ঘন্টায় দু নৌকা আকপাখি শিকার করেছিলেন। এদের ডিমও কম চালান যায়নি ভিনদেশে। ক্যাপ্টেন মুড ১০০,০০০ ডিম সংগ্রহ করেছিলেন এক দিনে।অতীতে সমুদ্র পথে যাত্রা যেমন ছিল সময় সাপেক্ষ তেমনই ছিল প্রতিকূল, ঝুঁকিময়।তখন ঐ সমস্ত দ্বীপের পাখিরাই ছিল নাবিক ও নৌ-যাত্রীদের খাদ্যের উৎস।এই ভাবেই এই পাখির সংবাদ মানব সমাজে ঘোষিত হয়।মাংসের স্বাদগুনে এদের শিকার মাত্রা় এমনিতেই ছিল বাড়ার মুখে, তার ওপর ওই শিকার ব্যাপকতা পেল যখন বণিকরা আবিষ্কার করল যে আকপাখির পালক এক উৎকৃষ্ট পণ্যের জন্ম দিতে পারে। তারপর যেই পালক শিল্প গড়ে উঠল- আকপাখির নিধনযজ্ঞও শুরু হলো পুরোদমে।