[wbcr_html_snippet]: PHP snippets error (not passed the snippet ID)
১৯৬০-এর দশকে পশ্চিমবঙ্গে চিত্রকলার ক্ষেত্রে একটা নতুন চেতনার উন্মেষ ঘটেছিল, এরকম বললে অত্যুক্তি হয় না।এবং পরবর্তী সময়ে ষাটের দশকে প্রতিষ্ঠাপ্রাপ্ত শিল্পীদের হাতে তা ক্রমশই আরাে বিকশিত হয়েছে, আরাে সংহতি
অর্জন করেছে। এই বিকাশ ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের চিত্রচর্চার সঙ্গে সমান্তরাল হলেও, তা থেকে স্বতন্ত্র। অথাৎ পশ্চিমবঙ্গের শিল্পীদের কাজে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যা, শিল্পী ভেদে প্রত্যেকের নিজস্বতা সত্ত্বেও, এক সামগ্রিক
ঐক্যের ইঙ্গিতবাহী; আর সেই ঐক্যের যে বিশেষ ধরণ, সেটা অন্যান্য অঞ্চলের শিল্পীদের প্রকাশভঙ্গি থেকে একটু আলাদা। এই স্বাতন্ত্র্যের পেছনে একদিকে পশ্চিমবঙ্গের চল্লিশ দশক পরবর্তী সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার
ভূমিকা যেমন আছে, তেমনি আছে বিংশ শতকের গােড়া বা আরাে একটু আগে থেকে স্বদেশ চেতনার সঙ্গে যুক্ত বাংলার চিত্রচর্চা ও শিল্পচিন্তার প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ প্রতিফলনও।ষাটের দশকের চিত্রচর্চার স্বরূপ বুঝতে এই পরিপ্রেক্ষিতটি খানিকটা অনুধাবনের প্রয়ােজন আছে। আমরা প্রথমে আধুনিক পর্বে বাংলার চিত্রচর্চার গােড়ার দিকটি সম্পর্কে খানিকটা আলােকপাতের চেষ্টা করব। তারপরে বােঝার চেষ্টা করব চল্লিশ দশকে প্রতিষ্ঠাপ্রাপ্ত শিল্পীরা ষাট দশকের পরবর্তী সময়ে যে কাজ করেছেন, তার স্বরূপ ও ধারাবাহিকতা।এই পরিপ্রেক্ষিতটি মনে রাখলেই ষাটের শিল্পীদের কাজের বৈশিষ্ট্য স্পষ্টতর হবে।নিজের ছবি সম্পর্কে ভাবতে গিয়ে ‘ঘরােয়া’র স্মৃতিচারণায় বলেছিলেন অবনীন্দ্রনাথ, “এই যে স্বদেশী যুগে ভাবতে শিখেছিলুম, দেশের জন্য নিজস্ব কিছু দিতে হবে, সেই ভাবটিই ফুটে বের হল আমার ছবির জগতে।” এই স্বদেশচেতনা সূচনা পর্বে বাংলার আধুনিক চিত্রকলার এক অবিচ্ছেদ্য বৈশিষ্ট্য ছিল। আর অবনীন্দ্রনাথ ছিলেন এর
অবিসংবাদিত পথিকৃৎ। ১৮৯৫-তে অবনীন্দ্রনাথ ‘কৃষ্ণলীলা’ চিত্রমালার যে ছবিগুলাে শুরু করেছিলেন, একটা নতুন দিগদর্শনের ইঙ্গিত ছিল তার মধ্যে। দৃশ্যশিল্পে একটা জাতির আত্মপরিচয় সন্ধানের সূচনা বলা যায় তাকে।সর্বভারতীয় প্রেক্ষিতে বাংলার চিত্রকলার স্বাতন্ত্রের অন্যতম উৎস এটাই যে স্বাদেশিকতার আবহাওয়ায় এখানে গড়ে উঠতে পেরেছিল বিশেষ এক শিল্পদর্শন, নিও-বেঙ্গল স্কুল বা নব্যবঙ্গীয় ঘরানা নামে যা সুপরিচিত। উনবিংশ শতকে নবজাগরণের শেষ ফসল আমাদের চিত্রকলা। নবজাগরণের ছত্রছায়ায় তা উদ্বুদ্ধ হয়েছিল ঐতিহ্যের অন্বেষণে।১৮৫৪ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল স্কুল অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল আর্ট’ ব্রিটিশ সরকারের পৃষ্ঠপােষকতায়। ছবি আঁকার কিছু কারিগর তৈরি করা ছিল সেখানে মূল উদ্দেশ্য। শিক্ষার ধাচটা নেওয়া হয়েছিল ব্রিটিশ রয়াল অ্যাকাডেমি থেকে। ১৮৬৫-তে ‘স্কুল অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল আর্ট’ ‘গভর্নমেন্ট স্কুল অব আট’-এ রূপান্তরিত হয়। পাশ্চাত্য রীতির শিক্ষার পদ্ধতিটা সেখানে অপরিবর্তিতই থাকে।ভারতীয় শিল্পের বৈশিষ্ট্য ও মহত্ত্ব ইংরেজ কলারসিকরা অন্তত সেই সময় পর্যন্ত মােটেই হৃদয়ঙ্গম করতে পারেননি। তাদের খানিকটা বিরূপ প্রতিক্রিয়াই ছিল। যেভাবে সেই আর্ট স্কুল চলছিল,সেভাবেই যদি চলত, তাহলে চিত্রকলার আধুনিকতার স্বরূপটা আজ অন্যরকম হত। কিন্তু একজন ইংরেজ অন্ততসেই সময় ভারতীয় শিল্পের মহত্ত্ব ও গভীর তাৎপর্য উপলব্ধি করেছিলেন। তিনি ই বি হ্যাভেল (১৮৬১-১৯৩৪)।হ্যাভেল ১৮৮৪-তে মাদ্রাজের আর্ট স্কুলে অধ্যক্ষ হিশেবে যােগ দেন। সেখানেই একটি সরকারি সমীক্ষায় দেশীয় কারুকলা ও দেশীয় শিল্প ঐতিহ্য গভীরভাবে দেখার ও অধ্যয়নের সুযােগ হয় তাঁর। ওই ঐতিহ্যকে অবহেলা করে ভারতীয় শিল্পশিক্ষার যে কোনাে ভবিষ্যৎ নেই, একথা ইংরেজদের মধ্যে তিনিই প্রথম উপলব্ধি করেন।