Description
১৯৫৩ থেকে ১৯৫৫ পর্যন্ত প্রতি বছর কলকাতায় একক প্রদর্শনী করেছেন প্রকাশ। কুড়ি বছর বয়স থেকে শুরু করেছিলেন। ১৯৫৫র ডিসেম্বর ‘স্টুডিও’ গ্রুপে যােগদান করেন। ১৯৫৬-তে দলের সঙ্গে যৌথ প্রদর্শনী করেন। পরের বছরে একটি একক। ১৯৫৮-এ আবার গ্রুপের যৌথ প্রদর্শনী।
১৯৫৯-এ ছাব্বিশ বছর বয়সে শিল্পী হিশাবে দ্রুত পরিচিত হলেন তিনি।ওই বছরে সদর স্ট্রিটে জাদুঘরের উত্তরের রেলিং-এ ছবির প্রদর্শনী করেন।কাগজেপত্রে তাকে আধুনিক শিল্পকলার পথিকৃৎ বলে অভিনন্দন জানানাে হল। দর্পণের কলা-সমালােচক বললেন, প্রকাশ ‘অমর। আনন্দবাজারে ‘খবর’, সমালােচনা ও সম্পাদকীয় বের হল। অমৃতবাজার লিখল : Lady Ranu Mukherjee, President of the Academy of Fine Arts and the Principal of Government College of Art and Craft, Shri Chintamoni Kar were among many noted
artists who visited this on the parment art display on Sunday and landed the works and the courage of the artist
(১৬-১১-৫৯)। স্বাধীনতা লিখল : ফুটপাতে প্রদর্শনী করা ভারতে এই প্রথম এবং কোনাে শিল্পী এই দৃঢ় সাহস করে নি, (তারিখ একই)। ছাপা হলাে ছবির ছবি, শিল্পীর ছবি, দর্শককে শিল্পী ছবির টীকাভাষ্য দিচ্ছেন। বিরাট জায়গা
দিয়ে ঘটনাটি কলকাতার সব কটি দৈনিক ও সাময়িক পত্রিকায় প্রদর্শনীর বিষয় লেখা হল।
‘দেশে’-র তৎকালীন সমালােচক চিত্রগ্রীব জিগ্যেস করলেন, প্রকাশ ফুটপাতে প্রদর্শনী করছেন কেন? প্রকাশ চটপট জবাব দিলেন, কারণ তিনটে—প্রথম, প্রদর্শনীর জন্য নির্দিষ্ট হলঘর ভাড়া করার মতাে আমার টাকা নেই। দ্বিতীয় আমি মনে করি আমার আর্ট জনগণের আর্ট, তাদের সামনে এ আর্টকে তুলে ধরবার মতাে উপযুক্ত স্থান আর কোথায়? তৃতীয়,
শিল্পী সমাজে যে তথাকথিত আভিজাত্যের লক্ষণ বর্তমানে দেখা দিয়েছে,তার মূলে কুঠারাঘাত করতে চাই।প্রকাশের নাম রাতারাতি শিল্পসংস্কৃতি প্রেমিক মানুষের মধ্যে প্রচারিত হয়। শনি রবিবার বেলা ২টো থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রদর্শনী হতাে। দলে দলে মানুষ দেখে যেতেন। সবশুদ্ধ চোদ্দটা ছবি দিল। এর মধ্যে দশটা ছিল নতুন মাধ্যমে আঁকা। ফটো রিটাচিং-এর রঙে শিরিষের আঠা মিশিয়ে তেলরঙের তুলি দিয়ে ছবিগুলি আঁকা। মাধ্যমের উদ্ভাবক ভগ্নীপতি নিতাই দে। অন্য
চারটে ছবি সাধারণ তেলরঙের।এই ফুটপাত প্রদর্শনীর আগে ১৯৫৭ আর্টিস্ট্রি হাউসে ১১-২৩ জানুয়ারি প্রকাশের প্রদর্শনী হয়। জলরঙের ছবি। গ্যাংটক, কালিংপঙ, দার্জিলিং,দীঘার ছবি। প্রকাশ আরাে আগে নিমতলার ঘাট, গঙ্গা, নৌকা নিয়ে যেসব জলরঙের ছবি একেছিলেন। পর্বত বা সমুদ্রে গিয়ে দৃশ্যান্তর ঘটলেও করণকৌশল বিচার করলে একই ধরণের ছবি এঁকেছেন। স্বচ্ছ জলরঙে কাগজের শাদাকে আলাের উৎস হিশাবে ব্যবহার করে মায়াময় সব দৃশ্য এঁকেছেন। কিন্তু নিসর্গের মতাে, মানুষজন, জীবন সম্বন্ধে তার আগ্রহ ফুটে উঠেছে। কার্জেন পার্কে কুয়াশা ধূসর ভােরের আবছা ছবি ছিল।
Be the first to review “নৈরাজ্যের নীলিমা প্রকাশ কর্মকারের চরিতমানস ও শিল্পকলা -সন্দীপ সরকার”
You must be logged in to post a comment.