ভারতীয় ধর্মনীতি এগারােটি প্রবন্ধ ও একটি মূল্যবান ভূমিকার সঙ্কলন। বেদ, উপনিষদ, ধর্মশাস্ত্র, রামায়ণ-মহাভারত, গীতা ও বিভিন্ন ভারতীয় দর্শনের আকর গ্রন্থের ওপর ভর করে লেখা এই প্রবন্ধগুলি। কোনাে কোনো দার্শনিকের মতে ভারতীয় ধর্মনীতি আদৌ একটি শাস্ত্র নয়। বর্তমান বইটিতে রয়েছে। এমন সংশয় নিরসনের মৌলিক প্রয়াস। এই শাস্ত্রের মূলসূত্র বিচারের পাশাপাশি আধুনিক দর্শনের নিরিখে সমস্যাগুলির পুনর্মূল্যায়নের চেষ্টাও এখানে করা হয়েছে। ভারতীয় ধর্মনীতির ছাত্র-ছাত্রী, গবেষক ও জিজ্ঞাসু পাঠকের কাছে এই প্রবন্ধগুচ্ছ সমাদৃত হবে।ভারতীয় দার্শনিক মহলে যে-কোনাে গ্রন্থের প্রারম্ভে পাঠকের সুবিধার্থে অনুবদ্ধ-চতুষ্টয় নিরূপণ করার রীতি আছে। এই চারটি অনুবন্ধের মধ্যে ‘বিষয়’, ‘প্রয়োজন ও ‘অধিকারী নির্দেশিত হলে সহজেই পাঠক গ্রন্থপাঠে প্রবৃত্ত হন। এই গ্রন্থের শিরােনাম থেকে বুঝতে কোনাে অসুবিধা হয় না যে ভারতীয় এথিক্স অর্থাৎ নীতিশাস্ত্রের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলােচনার উদ্দেশ্যেই এখানে বিভিন্ন স্বাদের কিছু প্রবন্ধ সংকলিত হয়েছে। এই জাতীয় প্রবন্ধ সংকলনের আদৌ কোনাে প্রয়ােজন ছিল কি? এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া এই মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরী, কারণ শুনেছি, বিনা প্রয়ােজনে অতি মন্দবুদ্ধি ব্যক্তিও কোনাে কাজে প্রবৃত্ত হন না। উত্তরে বলি – প্রয়ােজন নিশ্চয়ই ছিল – নানাবিধ প্রয়োজন ছিল পাঠকের দিক থেকেতাে বটেই প্রবন্ধকারের দিক থেকেও কিছু কম নয়। আর এই ক্ষুদ্র সংকলনটির সংকীর্ণ পরিসরে সে-সমস্ত প্রয়ােজন যে মিটিয়ে ফেলা গেছে এমনও নয়। এ যে নিতান্তই স্বল্পারম্ভসে-বিষয়ে আমরা সম্পূর্ণ সচেতন, তবুও কামনা করি অয়মারম্ভ শুভায় ভবতু।প্রয়ােজনের কথায় ফেরা যাক। একবিংশ শতাব্দীর প্রাকৃকালে সারা পৃথিবী জুড়ে চলেছে নৈতিকতার আলােচনা। সে আলােচনায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ না করলে আমরা ক্রমাগতই পিছিয়ে পড়ব। কারণ মানুষের মূল্যবোধ যতই পরিবর্তিত হচ্ছে, কর্তব্য-অকর্তব্য কিল আমাদের সম্মুগ্ধতা ততই বাড়ছে। কখনাে এমনও মনে হয়, নীতিহীনতা বা তথাকথিত দুর্নীতিপরায়ণ বোধ হয় বর্তমান নীতি। তাই সমকালীন মানুষের প্রশ্ন: আমাদের পুরােনাে মূল্যবােধকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকা সম্ভব কি?সনাতন আদর্শের প্রতি নিষ্ঠা কি আমাদের টেনে নিয়ে যাবে অবলুপ্তির পথে? প্রাগৈতিহাসিক ডাইনােসরের মত আমরাও কি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাব? যা-কিছু একদিন সত্য বলে মেনেছি, ধ্রুব বলে জেনেছি, কল্যাণ-সুন্দর বলে চিনেছি, সে-সবই কি বিসর্জন দিতে হবে, যদি আমরা পা বাড়াই আধুনিক সভ্যতা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পথে? প্রাচীন ও নবীন জীবন বোধের মধ্যে কোথাও কি খুঁজে পাওয়া সম্ভব সামঞ্জস্যের সূত্র? এ বিশ্বে সত্যিই কি আছে শাশ্বত কোনাে নৈতিক আদর্শ ও নতুন প্রজন্মের কাছে প্রকাশ করতে হবে যুগােপযােগী মাধ্যমে ? এই প্রশ্নগুলির ও এ রকম আরাে অনেক সমস্যার সমাধান করতে হলে ভারতের সনাতন নৈতিক আদর্শ সম্বন্ধে আমাদের সচেতন হতে ,হবে অবহিত হতে হবে।