Description
বাজপেয়ী-মোদী উভয়ের সময় কালের রাজনৈতিক ধারাভাষ্যের বিশ্লেষণ এই বইতে সংকলিত করার চেষ্টা করেছেন লেখক গৌতম রায়।এই সময়ের ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িকতার বিবর্তন বুঝতে বইটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বলে লেখক এর মত।মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং রাজস্থানে দীর্ঘকাল ধরে আর এস এস যে সােশাল ইনঞ্জিনিয়ারিং চালিয়েছে—তার প্রেক্ষিতে অনেকেরই মনে এই
সংশয় তৈরি হয়েছিল যে, ওই রাজ্যগুলি থেকে আদৌ আর এস এসের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করা যাবে কিনা—সে সম্পর্কে।বিজেপির প্রচলিত রাজনীতির থেকেও কয়েকশােগুণ ভয়ঙ্কর তাদের মূল চালিকা শক্তি আর এস এসের ‘সামাজিক প্রযুক্তি’–এই বােধ এবং প্রত্যয়।গত দু’দশক ধরে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ মানুষের হয়েছে। এই সামাজিক
প্রযুক্তির অন্যতম সূতিকাগার হলাে অবিভক্ত মধ্যপ্রদেশ, সেখানকার রায়পুর শহরকে কেন্দ্র করেই ছয়ের দশকে আর এস এস তৈরি করেছিল।তাদের শাখা সংগঠন ‘বনবাসী কল্যাণ আশ্রম’। উচ্চবর্ণের রাজনৈতিক অভিজাত হিন্দুদের প্রতিষ্ঠান হিশেবে আর এস এস-এর সাবেক রাজনৈতিক সংগঠন ‘ভারতীয় জনসংঘ’ বা তার বিবর্তিত রূপ ‘ভারতীয় জনতা পার্টির
যে পরিচিতি তৈরি হয়েছে, তাকে অন্য খাতে পরিচালিত করবার উদ্দেশ্য নিয়েই আর এস এস ছয়ের দশকে এই ‘বনবাসী কল্যাণ আশ্রম’ নামক
তাদের শাখা সংগঠনটি তৈরি করেছিল। সংশ্লিষ্ট সংগঠনটি আদিবাসী(যাদেরকে রাজনৈতিক হিন্দুরা ‘বনবাসী’ বলে অভিহিত করে থাকে), দলিত,নিম্নবর্গীয় হিন্দুদের ভিতর আর এস এস-এর হিন্দুত্ববাদী দর্শন প্রচার এবং প্রসারের উদ্দেশ্যে কাজ করে থাকে। নিম্নবর্গীয় হিন্দুদের গােলওয়ালকরের হিন্দুত্বের ছাতার তলায় নিয়ে এসে এই সংগঠনটির মাধ্যমে নিজেদের।
রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপির পায়ের তলায় রাজনৈতিক জমি যােগাবার কাজ করে আর এস এস।ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সভয়কালে যে আর এস এস এবং তাদের প্রধান সহযােগী বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দল ও তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপিকে আমরা দেখেছিলাম, তাতে বহু মানুষের ভিতরেই এই ধারণার সৃষ্টি হয়েছিল যে, রাজনৈতিক হিন্দুরা হলো উচ্চ বর্ণের হিন্দু অভিজাতদের প্রতিনিধি। দশরথনন্দন রামচন্দ্রকে ঘিরে তাদের শীবারব দেখে অনেকেরই মনে রামকাহিনির নায়ক রামচন্দ্র কর্তৃক শম্বুক বধের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিম্নবর্গীয় হিন্দুদের আর এস এস-বিজেপি যথাযােগ্য রাজনৈতিক মর্যাদা দেয় না–এই প্রত্যয় জন্মেছিল। আদর্শগত ভিত্তিতে উচ্চবর্ণের হিন্দুদের প্রতিনিধিত্ব করলেও নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে হিন্দুত্ববাদীরা যে দলিত, নিম্নবর্গীয় হিন্দুদের ব্যবহার করতে পিছপা হয়
না—তা সংঘের এই শাখা সংগঠন ‘বনবাসী কল্যাণ আশ্রম’কে ঘিরে কর্মকান্ড দেখলেই বুঝতে পারা যায়। এই সংগঠনটিকে আর এস এস নিম্নবর্গীয় হিন্দুদের বিজেপির পক্ষে নিয়ে আসার উদ্দেশে অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সঙ্গে ব্যবহার করেছে। অবিভক্ত মধ্যপ্রদেশে সংগঠনটি সৃষ্টি করলেও খুব অল্প।সময়ের ভিতরেই হিন্দুত্ববাদী শক্তি সংশ্লিষ্ট সংগঠনটিকে গােটা হিন্দি বলয়ে
ছড়িয়ে দিয়েছে।গত শতকের নয়ের দশকে কেন্দ্রে একক বৃহত্তম শক্তি হিসেবে আর
এস এস-এর রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপিকে তুলে আনবার লক্ষ্যে হিন্দুত্ববাদীদের সামাজিক প্রযুক্তির যাবতীয় নীল নক্সাকে সফল করতে
এই ‘বনবাসী কল্যাণ আশ্রম’ বিশেষ অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছিল।এন ডি এ নামক নীতিবিহীন, সুবিধাবাদী জোট অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে যে প্রায় সাড়ে ছয় বছর ভারত শাসন করেছিল তার নেপথ্যে এই
‘বনবাসী কল্যাণ আশ্রম’-এর একটা সক্রিয় ভূমিকা ছিল। যে গুজরাট গণহত্যার জেরে রাজনৈতিক হিন্দুদের নয়নের মণি হয়ে ওঠেন আজকের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি, তিনি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন গুজরাট
গণহত্যা সংগঠনে, বিশেষ করে গুজরাটের মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষদের জানমালের উপর নৃশংস, দানবীয় হামলার অন্যতম প্রধান নেতৃত্বকারীহিসেবে এই ‘বনবাসী কল্যাণ আশ্রম’ অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ভূমিকা রেখেছিল।
Be the first to review “ভারতীয় ঐতিহ্য বনাম সংঘ-বিজেপির মৌলবাদ-গৌতম রায়”
You must be logged in to post a comment.