Description
‘নকশালবাদী রাজনীতির বিভিন্ন ধারা’ সংক্ষিপ্তাকারে সর্বপ্রথম শারদীয় ‘প্রত্যয়’-এ প্রকাশিত হয় । নকশালবাদী রাজনীতির সূচনাপর্ব থেকে ঐ রাজনীতির মতাবলম্বী বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ভারতীয় বিপ্লবের রণকৌশল গত প্রশ্নে (কয়েকটি ক্ষেত্রে রণনীতিগত প্রশ্নেও) যে মতবৈষম্য দেখা দিয়েছিল এবং যা বর্তমানেও পুরোপুরি বজায় আছে, বর্তমান গ্রন্থে তারই একটি সামগ্রিক রুপ তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ করা দরকার,গ্রন্থটিতে শুধুমাত্র তাত্ত্বিক ওগুলিই বিবেচিত হয়েছে এবং সেগুলির অধিকাংশই প্রাথমিক সূত্রে প্রাপ্ত দলিল সমূহের উপর ভিত্তি করেই (যেগুলি নয়, সেগুলি অবশ্য অন্যভাবে উল্লিখিত হয়েছে)।ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনে নকশালবাদী রাজনীতির আবির্ভাব নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই রাজনীতি গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে সশস্ত্র কৃষিবিপ্লবের রাজনীতি।বস্তুতপক্ষে ১৯৫৬ সালে সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির বিংশতিতম কংগ্রেসে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাজতন্ত্রে উত্তরণের যে তত্ত্ব নির্দেশিত হয়েছিল এবং তার ফলে ভারতবর্ষের বামপন্থী রাজনীতি সেই তত্ত্বের অনুসরণে যে পথ গ্রহণ করেছিল, নকশালবাদী রাজনীতি সেই পথ বা দৃষ্টিভঙ্গীর বিরুদ্ধে একটি সােচ্চার প্রতিবাদ। ভারতবর্ষের মত কৃষিপ্রধান দেশে সংসদীয় গণতন্ত্রে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে যে কৃষিবিপ্লব সফল হতে পারে না। এই বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গীর দিকে নকশালবাদী রাজনীতি ভারতবর্ষের জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এক কথায়, নকশালবাদী রাজনীতি দুটি সমস্যাকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে : এক, কৃষিবিপ্লব, যা তাদের মতে, ভারতবর্ষের বিপ্লবের কেন্দ্রবিন্দু, তা বর্তমান ভারতীয় সমাজ-ব্যবস্থার কাঠামোর মধ্যে সম্পন্ন হওয়া সম্ভব কিনা এবং যদি সম্ভব হয়, তবে সেই লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণ উপায়ে পৌছানাে সম্ভব কিনা ? নকশালবাদীদের সশস্ত্র কৃষিবিপ্লবের প্রেরণার উৎস হচ্ছে, তাদের মতে, মার্কসবাদ-লেনিনবাদ ও সর্বোপরি মা ও সে-তুঙের চিন্তাধারা। প্রকৃতপক্ষে যদিও তেলেংগানার আন্দোলনে (১৯৪৬-৫১) রাজেশ্বর রাও-এর নেতৃত্বে মাও সে-তুঙের চিন্তাধারার
আলােকে ঐ আন্দোলনকে সাফল্যমণ্ডিত করার সাময়িক প্রচেষ্টা চালানাে হয়েছিল (পরে অবশ্য ঐ আন্দোলন আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট কর্তৃত্বের
( cominform ) অর্থাৎ সােভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির নির্দেশে স্থগিত রাখা হয়।) তথাপি একথা অনস্বীকার্য যে নকশালবাড়িতে মাও সে-তুঙের
চিন্তাধারাকে সর্বপ্রথম ব্যাপক ও সুসংহতভাবে প্রয়ােগের চেষ্টা হয়।সংক্ষেপে, কৃষি বিপ্লবকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য আন্তরিক প্রয়াস এবং তার জন্য সংসদীয় রাজনীতির প্রতি গভীর অনাস্থা বা অনীহা ও সশস্ত্র সংগ্রামের প্রতি ঐকান্তিক আস্থা প্রভৃতি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক থেকে নকশালবাদী রাজনীতিকে সমকালীন ভারতবর্ষের রাজনৈতিক পট প্রেক্ষায় একটি অভিনব সংযােজনও বলা যেতে পারে।
Be the first to review “নকশালবাদী রাজনীতির বিভিন্ন ধারা- তরুণ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়”
You must be logged in to post a comment.