Description
ভারতের ধর্মঘটের আধুনিক কালের ইতিহাসে কলকাতার পাল্কি-বাহকগণই ধর্মঘট পালনের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন । সেকালে যানবাহনের ক্ষেত্রে পাল্কির কদর অভিজাত সম্প্রদায়ের মধ্যে যথেষ্ট ছিল।অন্তঃপুরের মহিলারা ঝালর ঢাকা, পাল্কিতে চড়ে গঙ্গায় স্নান করতে যেতেন প্রায়ই। পাল্কি বেয়ারারা ঘাটে নেমে পাল্কি সহ পুরনারীদের গঙ্গার পবিত্র জলে চুবিয়ে নিয়ে ফিরে আসতেন অন্দর মহলে। সেকালের সমাজচিত্রে পাল্কির কদর কেমন ছিল তা এ-থেকে অনেকখানি অনুমান করা যেতে পারে।
লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংসের আমলে পাল্কিই ছিল এ দেশের পরিবহনের একমাত্র অবলম্বন ।
কলকাতার সর্বত্রই পাল্কি বেয়ারাদের চলাচল ছিল এবং সব জায়গা থেকেই তা পাওয়া যেত। বিশেষ বিশেষ জায়গায় পাল্কির আডডা বা পাল্কি
স্ট্যাণ্ডও ছিল, একালের বাস স্ট্যাণ্ডের মতােই। এদেশে বিদেশীদের আগমন ঘটতো জাহাজ থেকে নেমে – ওড়িয়া বেয়ারদের কাধে চড়েই !
এ-ছাড়া সেকালের বেশীর ভাগ সাহেবই পাল্কিতে চড়েই স্কুল-কলেজ-অফিস-কাছারিতে যাতায়াত করতেন। হেয়ার সাহেবের স্কুলে পড়ার জন্যে কত
ছাত্ৰই না হেয়ারের পাল্কির পিছনে পিছনে মাইলের পর মাইল ছুটেছেন।ব্যক্তিগত পাল্কি ছাড়াও সরকারী পােষ্ট অফিসের নিয়ন্ত্রণেও পাল্কি চলাচলের সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা ছিল। সে-সব পাল্কি পরিচিত ছিল ডাক চৌকি নামে।পাল্কির বেয়ারাদের ডাক-চৌকিতে থাকার জন্যেও ব্যবস্থা ছিল উত্তম।দূরবর্তী কোন জায়গায় যেতে হলে ডাক-চৌকিই একটা সুবিধা জনক ব্যবস্থা।
ডাক-চৌকির সাহায্যেই দেশের বিত্তশালী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ দূর দেশে যাতায়াতের সুযােগ নিতেন।’ ডাক-চৌকির মােটামুটি একটা ভাড়ার হার জানা যায় ৬ই জানুয়ারীর ১৭৮৫ সালের কলকাতা গেজেটের এক সরকারী বিজ্ঞপ্তি থেকে। কলকাতা থেকে বিভিন্ন জায়গার পথের দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারিত হতাে। এই ভাড়া একালের হিসেবে প্রথম শ্রেণীর ট্রেনে চড়ার ভাড়ার চেয়েও বেশী বললে ভুল হবে না।
Be the first to review “ভারতে ধর্মঘটের ইতিহাস -বাসুদেব মোশেল”
You must be logged in to post a comment.