পুরানো বই আর শিল্পের বিপণি 'ধানসিড়ি'র সাথে পথ চলতে গিয়ে যেসব ভাবনারা আমার চিন্তাকে ক্রমাগত অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল তেমন কিছু আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। জাঁ-পল সার্ত্র তাঁর Les Mots বইতে লিখেছিলেন যে, তাঁর কাছে "গ্রন্থাগার ছিল দর্পণে-ধরা পৃথিবী।...আমি জ্ঞান থেকে যেতাম বস্তুতে; আমি বস্তুর চেয়ে আইডিয়ার মধ্যে বেশি বাস্তবতা দেখতে পেতাম।...পৃথিবীর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ ঘটত বইয়ের মধ্যে।..আমার ত্রিশ বছর লেগেছে এই ভাববাদ থেকে মুক্ত হতে।" ভলতের, যিনি বিশ্বাস করতেন ইচ্ছে করলে 'ছোটো ছোটো কুড়ি পয়সার বই'দিয়ে বিপ্লব ঘটানো যায়, 'ম্যাক্সিম' পড়ে লিখেছিলেন, 'খুব তাড়াতাড়ি বইটি পড়ে ফেললাম। তিনি অভ্যাস করালেন চিন্তা করতে,এবং ভাবনাচিন্তাগুলিকে এক সজীব,সুষম ও সংক্ষিপ্ত বাগবন্ধে ধরে রাখতে। এই গুন ইউরোপে রেনেসাঁসের পর, তাঁর আগে আর কারুর ছিল না।' খাঁটি শিল্পকলা স্বয়ং এক বাস্তব শক্তি, সমাজের ভাবজগতে যার অনস্বীকার্য মঙ্গলময় প্রভাব আছে।এবং তা শুধু 'সুখপ্রদ' অভিজ্ঞতার বাহন হয়েই আর নেই- প্রেম,প্রীতি,বাৎসল্য, সহানুভূতি ও সমস্ত মানবিক মূল্যবোধের ও অনুভূতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে।সেজন্যই মানবিক সম্পর্কের ব্যাথা বেদনা কান্নাহাসির দিকগুলো শিল্পের রসে সিক্ত হয়ে উঠে অনুভূতিকে আরো বেশি আলোড়িত করে,মূল্যবোধকে গভীরতর করে, মানুষকে আরও উদার ও রসিক করে তোলে। ফুলতো মানুষ কবে থেকেই ভালোবাসে।কিন্তু শিল্পীই যুগ যুগ ধরে তার রূপমাধুরী কে নানাভাবে ও ভঙ্গিতে ছবিতে ফুটিয়ে তোলার পরে আজকের চিত্ররসিক দর্শক কি সেই চোখেই তাকে দেখে,যেমন দেখত তার সুদূর প্রপিতামহরা ? সমাজের রুচি ও রসবোধের এই ক্রমপরিবর্তন ঘটার পেছনে শিল্পের বিরাট ভূমিকা আছেই।