Description
ক্ষমতার ভাষা এবং ক্ষমতার নন্দনতত্ত্ব অস্বীকার করে ১৯৬৩-৬৪তে শুরু হয়হাংরি জেনারেশন আন্দোলন। যারা এ কাজে বিপদ বুঝেছিল তারা আন্দোলনের একেবারে প্রথমেই সরে পড়ে। তিন দশক ধরে চলে এই আন্দোলনের ঝড়। বাংলা
সাহিত্য এবং সংস্কৃতি জগৎ এই আন্দোলনের দাপটে ওলট-পালট খেতেথাকে। চলতে থাকে এই সব কবি লেখকদের উপর তীব্র আক্রমণ।
১৯৬৪তে পুলিশ গ্রেপ্তার করে কয়েকজনকে। Time Magazine সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেয় এই আন্দোলনের বিষয়টি। “তিনটিদশকে অসংখ্যবার ধাক্কা খেয়েও উঠে দাঁড়ানাে, বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে প্রতিবাদী অন্তর্ঘাতমুখর
আন্ডারগ্রাউন্ড হাংরি আন্দোলনের প্রাণ পুরুষ শৈলেশ্বর ঘােষ”। তাঁর ভাষায় হাংরি আন্দোলন হল “বস্তুসমূহের ষড়যন্ত্রময় অবস্থানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং “আধুনিকতার শবদেহের উপর
উল্লাসময় নৃত্য”। এই গ্রন্থে তিনি রেখেছেন তার নিজস্ব চিন্তাসমূহ, যাতে রয়েছে এই আন্দোলনের মৌল চেতনা গুলির নতুন- দর্শন যা ক্ষমতার ভাষাকে নিজের ভিতর থেকে ধ্বংস করতে চায়।
একজন তরুণ সাহিত্য-যশ-প্রার্থী একদিন আলােচনা প্রসঙ্গে দাবী করে, একজন লেখক
বেঁচে থাকবে (বা থাকে) তার ভাষার জন্য। যেমন জীবনানন্দ তার ভাষার জন্যই বেছে আছেন,—তাঁর ভাষা একেবারে নতুন, আমাদের অভিজ্ঞতায় ছিল না, এমন জিনিস।নিঃসন্দেহে কথাগুলি খুব খাটি—তার ঐ ভাষা ছাড়া কিভাবেই বা তিনি আমাদের চেতনারাজ্যে ঢুকতে পারতেন। কিন্তু একজন কবি তার ভাষার জন্যই বেঁচে আছে বা থাকে, একথাটি শুনতে যতটা সহজ আসলে তা নয়। কবিতা কি, কবিতার সঙ্গে ভাষার সম্বন্ধ কতটুকু, কবির সঙ্গেই বা কবিতার সম্বন্ধ কি, কবির উপর সমাজ ও ব্যক্তির
ধ্যানধারণার প্রভাব-অভিজ্ঞতা ও চৈতন্যের পরিধি এবং সবচেয়ে বড় প্রশ্ন আসে
চৈতন্য সে সৎ কি অসৎ! ভাষা একজনের চৈতন্যের যথার্থ প্রকাশ, সেইজন্যই ভাষার প্রশ্নটি খুব জরুরী, কারণ কোন ভাষা ভবিষ্যৎ গ্রহণ করবে তা নির্ভর করে কোন চৈতন্য, পরবর্তীকালের মানুষের মস্তিষ্ক ও হৃদয়কে আলােড়িত করবে। বুদ্ধদেব বসু বা বিষ্ণু দের
ভাষা পরবর্তী আধুনিকদের কাছে কোন অর্থ বহন করেনি, কমুনিকেট করেনি, করেছে
জীবনানন্দের ভাষা। কবিতা ১০০ বছর আগে যে ভাষায় লেখা হয়েছে আজ তা হয় না,সম্ভবও নয়—এমনকি ১০/১৫ বছরে কবিতার ভাষাশরীর পরিবর্তিত হচ্ছে ব্যাপকভাবে।যন্ত্রযুগের অগ্রগতির সঙ্গে মানুষের মনের মধ্যে যে ব্যাপকতম টানাপােড়েন ; তার ছাপ
কবিতার শরীরে থাকবেই, ঋলিত ও গলিত এই সভ্যতার রূপ ও গন্ধ যতই ধরা পড়বে
কবির কাছে ততই তার ভাষা হবে খঙ্গের মত ধারালাে, নিষ্ঠুর এবং অভিজ্ঞতার আলাে
আঁধারির খেলা হবে তত বেশি। সমস্ত বিশ্বাসভঙ্গের পর মানুষের জীবন নিষ্ঠুরতা ও
ক্রুরতায় পূর্ণ হয়—আর এই নিষ্ঠুরতা ক্রমেই বেড়ে চলে, যেহেতু সে জীবনকে ভালবাসতে চায়, চায় অস্তিত্বের একটা অস্তিবাচক অর্থ পেতে, সােজাসুজি আত্মহত্যা সে করতে পারে না (আত্মহত্যার নূতন কারণ না পাওয়া পর্যন্ত পুরানাে কারণগুলি তার কাছে হাস্যকর বলেই মনে হয়)। তার সামনে আজ না আছে সেই ঈশ্বর না কোন অলৌকিক অভিজ্ঞতা। যদিও ভারতবর্ষের বহু মানুষ অলৌকিকে বিশ্বাসী এবং অলৌকিক‘ক্ষমতাসম্পন্ন গুরুতে এই দেশ পূর্ণ, কিন্তু তাদের আমি কোনভাবেই পাত্তা দিচ্ছি না, এই জন্য যে সৎ কবি ও পাঠক উভয়ের পক্ষেই অলৌকিকে বিশ্বাস এক ভয়ঙ্কর ভ্রান্তির মধ্যে ঢুকে পড়া ছাড়া আর কিছুই নয়।
Be the first to review “প্রতিবাদের সাহিত্য -শৈলেশ্বর ঘোষ”
You must be logged in to post a comment.