Description
এই বইয়ের ভূমিকায় লেখক শ্রী যোগেশচন্দ্র রায় লিখেছেন:-
আমাদের পূজা-পার্বণ অসংখ্য বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। স্থান- ভেদে পার্বণের ও ভেদ আছে। পশ্চিমবঙ্গের কতকগুলি পার্বণ পূর্ব-বঙ্গে নাই, পূর্ববঙ্গের কতকগুলি পশ্চিমবঙ্গে নাই। সকল পার্বণের বৃত্তান্ত সংগ্রহ করা দুঃসাধ্য। কেহ কেহ নারীদের ব্রতকথা প্রকাশ করিয়াছেন, কিন্তু তাহাও অসম্পূর্ণ। স্থানভেদে সেসকল ব্রতকথারও
রপান্তর আছে।পূজা-পার্বণের উৎপত্তি ও প্রকৃতি না জানিলে কথা মাত্র হয়,ইতিবৃত্ত হয় না। আমি এই পুস্তকে কতকগুলি প্রসিদ্ধ পুজা-পার্বণের
উৎপত্তি ও প্রকৃতি বর্ণনা করিয়াছি। ইহা হইতে পজা-পার্বণের প্রয়ােজনও স্পষ্ট হইবে। বঙ্গে যেমন পূজা-পার্বণ আছে, অন্যান্য প্রদেশেও তেমন আছে। এইসকল পুজা-পার্বণই হিন্দু জাতিকে এক-সূুত্রে বদ্ধ করিয়াছে; আচার-পালন দ্বারাই হিন্দ, জাতিস্মর হইয়াছে।দুর্গোৎসব বঙ্গের এক বৃহৎ উৎসব। কত বিদ্বান, ইহার কত প্রকার ব্যাখ্যা করিয়াছেন, কত পুরাণ উদ্ধৃত করিয়াছেন। কিন্তু রূপক ও পুরাণের শরণ লইলেই উৎপত্তি বুঝিতে পারা যায় না। এই পূজা প্রায় সহস্র বৎসর চলিয়া আসিতেছে ; বৎসর-গণনার আদি-স্বরূপ
হইয়া পড়িয়াছে। লােকে বলে, গত পূজার পরে এই হইয়াছিল।নানা পুরাণে দুর্গাপূজার উল্লেখ আছে। পণ্ডিতেরা সেসব পুরাণ উদ্ধৃত করিয়া পূজার উপাখ্যান বর্ণনা করিয়াছেন। কেহ মহিষাসুর-বধের আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা করিয়াছেন। কেহ বা বলিয়াছেন, তিনি যজ্ঞ-রূপা,অগ্নিস্বরূপা। কিন্তু অদ্যাপি কেহই দুর্গাপূজার উৎপত্তি এবং যাবতীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসহ প্রকৃতি চিন্তা করেন নাই। এই পুস্তকে আমি দুর্গাপূজার ইতিহাস অন্বেষণ করিয়াছি। যে ইতিহাসে দেশ ও কালের উল্লেখ না থাকে, সেটা ইতিহাস নয়।নানা প্রদেশে রচিত পুরাণে দুর্গাপূজার নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বর্ণিত হইয়াছে। সেসব আমাদের দুর্গাপূজায় একত্র হইয়া ইহাকে জটিল ও বৃহৎ করিয়া তুলিয়াছে। কেহ মনে করিয়াছেন, ইহা শবর জাতির উৎসব ছিল। কেহ মনে করিয়াছেন, আসামের অসভ্য পার্বত্য জাতির নিকট হইতে হিন্দুরা দুর্গাপূজার অনুষ্ঠান শিখিয়াছে। কিন্তু দুই
ক্রিয়ার মধ্যে দুই-এক অংশে সাদৃশ্য থাকিলেই এক হইতে অপরের উৎপত্তি প্রমাণিত হয় না।
পাঠক এই পুস্তকে বহু,নূতন,ও ভারতের অজ্ঞাতপূর্ব ইতিহাস জানিতে পারিবেন।নূতন বলিয়াই বহ, পাঠক এই ইতিহাস একবার
পড়িয়া বুঝিতে পারিবেন না। দুই তিন বার পড়িলে দেখিবেন,স্মৃতি ও পুরাণ কি অপূর্ব কৌশলে আমাদের ইতিহাস জনসাধারণের
মধ্যে প্রচারিত করিয়াছেন! এতদ্দেশীয় ও পশ্চিমদেশীয় বিদ্বানেরা আর্যকৃষ্টির প্রাচীনতা অনুমানে ভ্রম করিয়াছেন। বৈদিক সাহিত্যে
আর্যকৃষ্টির প্রাচীনতার বহু প্রমাণ আছে। কিন্তু সাধারণ পাঠকের নিকট সেসব প্রমাণ সুবােধ্য নয়। পুরাণ বেদ-বাহ্য নয়। পুরাণকার
পূজা-পার্বণে বেদেরই স্মৃতি সর্বসাধারণের বােধগম্য করিয়াছেন।যাঁহারা বঙ্গের কিম্বা ভারতের ইতিহাস লিখিতেছেন তাহাঁরা আমাদের
পূজা-পার্বণ পরিত্যাগ করিয়া আমাদের সংস্কৃতির ইতিহাস অসম্পূর্ণ রাখিতেছেন। যদি বা কেহ কেহ পূজা-পার্বণের উল্লেখ করিয়াছেন,তাহাঁরা উৎপত্তি নির্ণয়ে ভুল করিয়াছেন।
Be the first to review “পূজা-পার্বণ -শ্রীযোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি”
You must be logged in to post a comment.