Description
‘তেপান্তর’ নিয়ে দু-চার কথা:-
তেপান্তর রাজনীতির সাথে সম্পর্ক-রহিত একটা পত্রিকা নয়। তেপান্তর পত্রিকা-ই নয়। তেপান্তর সংহতির মুখপত্র। সংহতি একটি রাজনৈতিক সংগঠন। সংহতি একটি নন-পার্টি পলিটিকাল ফর্মেশন। এই ফর্মেশন খুঁজছে একটা (না, একটা নয়, খুঁজছে অনেক ..) রাজনৈতিক কার্যক্রম। খুঁজছে একটা মুভমেন্ট ইন থট। খুঁজছে ভাবনার, খুঁজছে চিন্তার একটা আন্দোলন … একটা হেলদোল। আন্দোলনের ভাবনা, আন্দোলনের চিন্তা, আন্দোলনের ব্যর্থতা থেকে উঠে এসেছে, উঠে গেছে চিন্তার আন্দোলনের প্রয়ােজনীয়তার অনুভব। তেমনই এক চিন্তা, তেমনই এক ভাবনা লিঙ্গ এবং যৌনতা নিয়ে ভাবনা।সনাতন(অর্থডক্স) মার্কসবাদের সারবাদী (এসেনশিয়ালিস্ট) শ্রেণীভাবনার আধিপত্যের যুগে আমরা চাইনা তেপান্তর লিঙ্গ এবং যৌনতার প্রেক্ষিতের (পারসপেকটিভ) সাথে সম্পর্ক-রহিত একটা পত্রিকা হয়ে উঠুক।তৃতীয় বিশ্বের অবলা নারীর ক্ষমতায়ন (এমপাওয়ারমেন্ট) প্রকল্পের লিবারল প্রেক্ষিতের আধিপত্যের যুগে আমরা চাই না তেপান্তর তৃতীয় র বিশ্বের (তৃতীয় বিশ্ব নয় কিন্তু) বিশেষ বাস্তবতার সাথে সম্পর্ক রহিত একটা পত্রিকা হয়ে উঠুক।সেক্সিজম (দৈনন্দিনের চর্যায় প্রত্যক্ষ যৌনহিংস্রতা) এবং পুরুষতন্ত্র-র যুগে, পিতৃনামের পরাক্রম (প্যাটার্নাল পেট্রিয়ার্কি) এবং ভাই-পুত্র-স্বামী বয়ফ্রেন্ডের (ফ্রেটার্নাল পেট্রিয়ার্কি) শাসনের যুগে, পুরুষ কেন্দ্রিকতা (অ্যান্ড্রোসেন্ট্রিজম) এবং লিঙ্গকেন্দ্রিকতার (ফ্যালােসেন্ট্রিজম) যুগে আমরা চাই না তেপান্তর(Radical) নারীবাদের সাথে, নারীবাদী অবস্থান (স্ট্যান্ডপয়েন্ট)-এর সাথে সম্পর্ক-রহিত একটা পত্রিকা হয়ে উঠুক।তেপান্তর বােধহয় ভিন্ন ধরনের একটি পত্রিকা। ভিন্নতর এক কল্পনা প্রায় শুরু থেকেই চালিত করছে এই পত্রিকাকে। ভিন্নতাগুলো অনেকটা এরকম:
তেপান্তর সংহতির মুখপত্র। সংহতি একটি অ-পার্টি রাজনৈতিক সংঘ। সংহতি এক নন-পার্টি পলিটিকাল ফর্মেশন। এখানে প্রাসঙ্গিক-সংহতির কর্মকাণ্ড, প্রত্যক্ষভাবে ক্ষমতার অলিন্দে নয়। সীমিত অর্থে ক্ষমতা দখলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপারে -অন্য পারে এক অন্যতর রাজনীতির কল্পনা সংহতিকে চালিত করে। সংহতির কর্মকাণ্ডের ফোকাস যেন অর্থ উৎপাদনের (production of meaning) ও মনন নির্মাণের বৃত্তে। ফলত, এক/দুই/অনেক সংগঠনকে ক্ষমতায় আসীন করা, বা সেখান থেকে তাকে/তাদেরকে চ্যুত করার কর্মসূচী নিয়ে তেপান্তরের চলমানতা নয়।আবার তেপান্তর সংহতির মুখপত্র মানেই তেপান্তর একটি সমসত্ত্ব ও অনুমােদিত সমস্বরের চিলচিৎকার নয়। মুখপত্রের এযাবৎকালীন ভাবনাটাকেই প্রশ্নের মুখে ফেলতে চায় তেপান্তরের ভাবনা। ভিন্ন সুর, ভিন্ন স্বর, ভিন্ন প্রেক্ষিত, ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক স্ট্যান্ডপয়েন্ট তেপান্তরের পাতায় পারস্পরিক কথােপকথনে ও সম্পর্কনির্মাণে ক্রিয়াশীল। কারণ সংহতির মধ্যেই ক্রিয়াশীল শ্রম, শ্রেণী, লিঙ্গ, বর্ণ, প্রকৃতির – নারী, নিসর্গ, নেটিভিটির স্ট্যান্ডপয়েন্ট। তবে কি সংহতি তথা তেপান্তর হাজারাে সুর, হাজারাে স্বর-এর এক বহুত্ব মাত্র? অবশ্যই নয়। আগ্রাসী একদেশদর্শিতা এবং নির্মোহ বহুত্ব- এই দুইতর সম্ভাবনার ওপারে, অন্য -পারে কোনও এক সম্ভাবনার কথা ভাবতে চাইছে তেপান্তর। ভাবতে চাইছে এথিকো-পলিটিকাল কোনও পরিসর।
এই এথিকো-পলিটিকাল পরিসরের খোঁজে তেপান্তরের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সামাজিক ভাবে তৈরী হয়ে থাকা, সামাজিকভাবে প্রােথিত হয়ে পড়া বিভিন্ন অর্থের পুনর্বিন্যাস এবং নতুন অর্থের নির্মাণ।সেই কারণে কোনও নির্দিষ্ট লেখকগােষ্ঠীতে আবদ্ধ বা নির্ভরশীল থাকার কোনও দায়বদ্ধতা তেপান্তরের নেই। গৃহীত অর্থের পুনর্বিন্যাস এবং নতুন অর্থনির্মাণের যে কোনও পরিসর তাই তেপান্তরে স্বাগত।তেপান্তর অ্যাকটিভিস্ট অথচ থিওরিটিক্যাল জার্নাল হিসেবে একভাবে আত্মপরিচয় গঠনে উন্মুখ। কিন্তু অ্যাকটিভিস্ট, থিওরিটিক্যাল এবং জার্নাল তিনটি শব্দেরই ন্যস্ত সামাজিক অর্থের বিনির্মাণ, হয়তাে প্রতিসরণ, হয়তাে বা সম্প্রসারণ ঘটিয়েই।
তেপান্তরকে তাই অ্যাকিটিভিস্ট থিওরি’ বা থিওরিটিক্যাল অ্যাক্টিভিজম পত্রিকা হিসেবেই ভাবার চেষ্টা করছি আমরা।
Be the first to review “সংহতি'র মুখপত্র তেপান্তর (৪) জুলাই ২০০৬”
You must be logged in to post a comment.