Description
মানবেন্দ্রনাথ রায় , যিনি তাঁর পিতৃদত্ত নরেন ভট্টাচার্য নামেই পরিচিত ছিলেন- শ্রী অরবিন্দ, বারীন ঘােষ,রাসবিহারী বসুর, বাঘা যতীনের ডান হাত, ভারতের প্রথম শহীদ ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকীর পুরােগামী, হরিকুমার, সাতকড়ি বন্দোপাধ্যায় প্রভৃতিকে নিয়ে সংগঠিত চাংড়িপােতা দলের নেতা এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে জার্মান সহযােগিতায় সশস্ত্র বিদ্রোহের পরিচালক।১৯১৫ সালে অস্ত্র সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ভারত ত্যাগের পর অস্ত্রের সন্ধানে ব্যাটাভিয়া,চীন, জাপান, কোরিয়া প্রভৃতি সমস্ত পূর্ব এশিয়া ঘুরে বার্লিনের পথে নরেন ভট্টাচার্য আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে পৌঁছান ১৯১৬ সালের ১৫ই জুন। সেখানে ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড শহরে সহযােগী বিপ্লবী যাদুগােপালের ভাই ধনগােপালের আতিথ্য গ্রহণ করেন।এবং সেখানেই নিজের নাম পরিবর্তন করে মানবেন্দ্রনাথ রায় নাম রাখেন প্রধানত ব্রিটিশ পুলিশকে ধোঁকা দেবার উদ্দেশ্যে, এবং দেশের সহযােগী বিপ্লবীদের জানানাের জন্য যে
তিনি জীবিত এবং জার্মানীর পথে আমেরিকায় পৌঁছেছেন। সেখানেই ধনগােপালের স্ত্রীর
পরিচিতা এভেলিন ট্রেন্ট নাম্নী এক সুন্দরী, বুদ্ধিমতি স্নাতিকার পরিচয় হয় যাকে পরে
নিউ ইয়র্ক শহরে তিনি বিবাহ করেন। নিউ ইয়র্কে পৌছান ১৯১৬ সালের অক্টোবর মাসে। নিউ ইয়র্কে পাঁচ মাস অপেক্ষা করার পরও সেখানকার ভারতীয় বিপ্লবীদের সংগঠন তাঁর বার্লিনে যাবার বন্দোবস্ত করতে পারেন নি, অথচ তাঁর বার্লিনে যাবারই প্রয়ােজন ছিল, অস্ত্রের জন্য জার্মান সরকারের অর্থের অনুমােদনের জন্য-যে অস্ত্রের বন্দোবস্ত চীনে থাকাকালীন সান ইয়াৎ সেনের মধ্যস্থতায় তিনি বন্দোবস্ত করেছিলেন।১৯১৭ সালের মার্চ মাসে আমেরিকান সরকার প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানীর বিরুদ্ধে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সঙ্গে যােগ দেবার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেই কারণেই হিন্দু-জামান ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। মানবেন্দ্রনাথ ঐ মামলায় ১০ই মার্চ অভিযুক্ত ও গ্রেপ্তার হন। পরদিন জামিনে
খালাস পেয়ে মানবেন্দ্রনাথ সস্ত্রীক মেক্সিকো পালিয়ে যান। মেক্সিকোতেই মানবেন্দ্রনাথ
সােশ্যালিষ্ট রাজনীতিতে আকৃষ্ট হন এবং পরে কমিউনিষ্ট হয়ে রাশিয়ার বাইরে প্রথম কমিউনিষ্ট পার্টি গঠন করে লেনিনের আমন্ত্রণে মস্কো যান এবং তৃতীয় কমিউনিষ্ট আন্তর্জাতিকের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা হয়ে ওঠেন। ১৯১৫ সালে ভারতবর্ষ ত্যাগের পর ১৫ বছর আত্মগােপন করে বিভিন্ন ছদ্মনামে বার্লিন, প্যারিস, তাসখন্দ, চীন প্রভৃতি দেশে বিপ্লবের কাজে মানবেন্দ্রনাথ ব্রতী হন।মানবেন্দ্রনাথ যখন লাতিন আমেরিকার দেশগুলিতে সােশ্যালিষ্ট আন্দোলন গড়ে তােলার
কাজে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ােগ করেছেন সেই সময় ১৯১৯ সালের গ্রীষ্মকালে রাশিয়ায়
সদ্য প্রতিষ্ঠিত তৃতীয় (কমিউনিষ্ট)আন্তর্জাতিকের প্রথম বৈদেশিক দূত মাইকেল বরােদিন মেক্সিকোয় এসে উপস্থিত হন এবং মানবেন্দ্রনাথের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করেন। আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহরে রুশ বাণিজ্যিক প্রতিনিধিদের খরচ চালাবার জন্য বরোদিন রাশিয়ার প্রাক্তন সম্রাটদের যে সব হীরা-জহরত নিয়ে আসছিলেন সেই সব হীরা-জহরত যে
সুটকেশে ছিল সেই সুটকেশটি পথে খােয়া যায়। তখন নিউ ইয়র্কের ‘বন্ধু’দের পরামর্শে বরােদিন মেক্সিকান সােশ্যালিষ্ট পার্টির ‘হিন্দু” সেক্রেটারীর সঙ্গে মেক্সিকো শহরে যােগাযোেগ করেন এবং জানতে পারেন যে মেক্সিকান সােশ্যালিষ্ট পার্টীর এই ‘হিন্দু” সেক্রেটারী মেক্সিকোর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ক্যারাঞ্জারও বেসরকারী ব্যক্তিগত উপদেষ্টা। মানবেন্দ্রনাথ বরােদিনকে তাঁর এই দুরবস্থায় তাঁকে নিজের বাড়ীতে আশ্রয় দেন এবং রুশ বাণিজ্যিক প্রতিনিধিদের খরচ খরচার জন্য দশ হাজার ডলার পাঠান।প্রায় দু’মাস মেক্সিকোয় মানবেন্দ্রনাথের অতিথি হিসাবে থাকাকালীন বরোদিন মানবেন্দ্রনাথকে মার্কসীয় চিন্তাধারায় প্রভাবিত করেন এবং রাশিয়ার বাইরে পৃথিবীর প্রথম কমিউনিষ্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা করতে উদ্বুদ্ধ করেন। মেক্সিকোর কমিউনিষ্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার অব্যবহিত পরেই বরােদিনের মারফৎ মানবেন্দ্রনাথের কাছে লেনিনের নিমন্ত্রণ আসে কমিউনিষ্ট আন্তর্জাতিক এর দ্বিতীয় বিশ্ব কংগ্রেসের অধিবেশনে প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেওয়ার জন্য।
Be the first to review “মানবেন্দ্রনাথ ও মার্কসবাদ -সমরেন রায়”
You must be logged in to post a comment.