সংস্কৃতির ভাঙা সেতু -আখতারুজ্জামান ইলিয়াস

Call / WhatsApp : +91 9563646472

To purchase / enquire about the book, send a WhatsApp message or call between 11 AM and 11 PM.

Description

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, চিলেকোঠার সেপাই-খােয়াবনামার আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, স্পষ্ট চাচাছােলা ভাষায় আওয়াজ তুলেছেন: বাংলা উপন্যাস এবার রং ফেরাক : বন্ধ হােক “মধ্যবিত্ত ব্যক্তির তরল ও পানসে দুঃখবেদনার পাচালি”, কথায়-কথায় মধ্যবিত্তকে, মধ্যবিত্তের ছকে-ফেলা কোনাে ধচকে, চরম-পরম বলে চালিয়ে-
চাপিয়ে দেওয়ার কেচ্ছা। সন্দেহ নেই, ইলিয়াস যত উঁচু তারেই স্বর বাধুন, অধিকাংশ লেখক তার আবেদনে সায় বা সাড়া দেবেন না, হাড়ের্পাজরায় মিশে থাকা হাজার-এক সংস্কার, হাওয়ায় হাওয়ায় ভেসে-আসা নানান পাওনা-বিশ্বাস খেলাচ্ছলেও বাজিয়ে দেখবেন না। মুখে যাই জপান মনে-মনে তারা ঠিক জানেন : খেলার প্রতিভা কম হলেই মঙ্গল : ঝুঁকি নিলে ঝক্কি বাড়ে, পরের পর ‘তলবহুল’ উপন্যাস গেঁথে তােলায় বেকার বাধা পড়ে। যাদের সহজ সিদ্ধি আর মুক্তহস্ত দানে বাংলা উপন্যাস ক্রমশ নিরাপদ হয়ে উঠেছে, আদতে তারা কোনাে না কোনাে অতিচর্চিত অতএব বহুবিদিত বয়ানের ঘেরে- ঘােরে বন্দী। তাদের ভূমিকাও তাই একটাই : চালু সব বাচন-রচনাকে শুদ্ধ ও টেকসই রাখতে, দাগকাটা সব বাক- এলাকায় অবাঞ্ছিত
অনুপ্রবেশ রুখতে, সীমান্তরক্ষীবৎ টহল দিয়ে ফেরা। অন্যদিকে ইলিয়াসের অভিমত ;
“কঠিনেরে ভালােবাসিলাম—এটুকু জেদ না থাকলে কারও শিল্পচর্চায় হাত দেওয়ার।
দরকার কী?” সে- জেদ যে অন্তত জনতােষ সাহিত্যের জোগানদারদের নেই, থাকবার।
কারণও নেই, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রচলিত মর্জিরুচির পােষক,সমাজবিবেকের অভিভাবক, দিকপাল সব লেখকদের পক্ষে তাই ইলিয়াসকে সহ্য করা, তাঁর সঙ্গে বনিবনায় আসা, বড়ই কঠিন। ইলিয়াস নিজেও তা ভালােরকম
জানেন। জানেন বলেই তার অভিপ্রেত পাঠক ও আবেদনের মূল লক্ষ্য বিশেষ এক গােষ্ঠীর লােকজন। সংখ্যায় নগণ্য হলেও তাদের রােখ আছে, রােষ আছে, কায়েমি স্বার্থ ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যােঝবার জোর আছে। নিরেট বন্দোবস্তের ছিদ্র-সন্ধানে তৎপর স্বভাব– জেহাদি এই লেখককুলই ইলিয়াসের বলভরসা : ব্যবস্থার বাম যারা তাদের সঙ্গেই তার যত যা বিনিময়, যত যা বােঝাপড়া।ইলিয়াস অবশ্য শুধু সন্ধি পাতিয়ে ক্ষান্ত হওয়ার পাত্র নন : মিতালির সুবাদে
সংলাপের যে-জমি তৈরি হয় তাকে পুরােপুরি কাজে লাগান : সমগােত্রের লেখকদের রচনায় আপােসের ফাঁকি পেলে চাপঢাকার বদলে নির্মম ভাবে উঘাটিত করে দেন,দরকারে খােলাখুলি সংঘাতে নামতেও পিছপা হন না। অযথা সমীহ করা বা ভাবালু প্রশ্রয় জোগানাে স্পষ্টবাক ইলিয়াসের ধাতে নেই—যে যত নিকট তার যাচাইপরখে।তত নির্মোহ তিনি। এটাই তার সমালােচনার দস্তুর, ফের আত্মসমীক্ষারও। চিলেকোঠার সেপাই-এর পর যিনি খােয়াবনামা লেখেন—এতই আলাদা দুই বই যে মনে হয় মলাটে লেখক-নামের মিলটা নেহাৎ কাকতালীয়—তারই বলা সাজে :স্বউদ্ভাবিত রচনা-প্রণালীও এক মস্ত ফাদ ; কারও যদি “নিজের ব্যবহৃত, পরিচিত ও পরীক্ষিত রীতির বাইরে যেতে বাধাে বাধাে ঠেকে,” “নিজের রেওয়াজ ভাঙতে মায়া হয়, তাহলে বুঝতে হবে তার শিল্পীজীবনে ইতি এই ঘনালাে বলে। আর যার হােক,নিরাপত্তার স্বস্তি কখনাে শিল্পীর অন্বিষ্ট হতে পারে না। বাস্তবতার দোহাই পেড়ে,সামাজিক অদলবদলের সঙ্গে নিছক তাল গুনে ঠেকা দেওয়াও তার কাজ নয়—পরিবর্তনের ঝোক কোনদিকে ধরতে চাইলে সাহিত্য-পাঠের পরিসরে জেনেবুঝেই তাকে গড়তে হয় অংশস্বতন্ত্র বিকল্প এক জগৎ। ঐ জানাবােঝার প্রেরণায় কেবল ‘বক্তব্য’ বা ‘সিদ্ধান্ত’ নয় পালটে যেতে পারে গােটা শিল্পঅবয়ব—তাতে হয়তাে এমন।কথাও তৈরি হতে পারে সাম্প্ৰতিকের নজিরসাক্ষ্যে যার তল পাওয়া দুষ্কর। অবশ্য আজ না হােক, কাল বা পরশু ঠিক পাঠোদ্ধার হবে, উপস্থাপনার প্রয়ােগসিদ্ধ রীতি ত্যাগ করলেই মােক্ষ মিলবে, তেমন স্থিরতাও নেই। ঐ অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও যারা বাস্তবের সম্ভাব্যতাকে খতিয়ে দেখতে যায়, শেষ পর্যন্ত হয়তাে তাদের দু একজন,সমাজরূপান্তরের যুক্তি চিনে ঘটিয়ে দেয় সাহিত্যযুক্তির রূপান্তর।

Be the first to review “সংস্কৃতির ভাঙা সেতু -আখতারুজ্জামান ইলিয়াস”