প্রাচীন ভারতের আয়ুর্ব্বেদ ও রসায়ন চিন্তা-আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়

Call / WhatsApp : +91 9563646472

To purchase / enquire about the book, send a WhatsApp message or call between 11 AM and 11 PM.

Description

প্রাচীন সুসভ্য জাতিগুলির মধ্যে রসায়ন সংক্রান্ত জ্ঞানের অগ্রগতির অনুসন্ধান করতে গেলে সর্বদাই দেখা যায় যে ঔষধ প্রস্তুতকরণ, ধাতু সংক্রান্ত কার্যকলাপ, প্রকরণগত কলাকৌশল এবং ধাতুর রূপান্তরে বিশ্বাসের সঙ্গে এটি
অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ইউরােপের থেকে অনেক বেশি করে ভারতে রসায়নবিদ্যা বিবর্তিত হয়েছে মূলত ঔষধ প্রস্তুতের সহায়ক হিসেবে, এবং
কিছুটা পরবর্তীকালে তান্ত্রিক উপাসনার অনুষঙ্গ হিসেবে। দেবদেবীদের হস্তক্ষেপ ছাড়া শুধুমাত্র ঔষধের কার্যকলাপকে পর্যাপ্ত বলে মনে করা হত না।তাই দেখা যায় ঋগ্বেদে অশ্বিনদ্বয়ের উদ্দেশ্যে মন্ত্রোচ্চারণ করা হচ্ছে—এঁরা ছিলেন দেব-চিকিৎসক, এঁরা দৃষ্টিহীনকে দৃষ্টিশক্তি দিতে পারতেন, পঙ্গুকে হাঁটতে সক্ষম করতে পারতেন। গ্রিক পুরাণের ডায়ােসকোউরােই-এর সঙ্গে
এই যমজ দেবতাদের বহু বিষয়ে সাদৃশ্য আছে। একটি কৌতূহলােদ্দীপক কাহিনি হল—কোনও-একটা সংঘর্ষের ফলে কুমারী বিশপলা-র একটি পা কেটে বেরিয়ে গিয়েছিল, অশ্বিনরা তৎক্ষণাৎ তার শরীরে লােহার পা জুড়ে দিয়েছিলেন।
ঋগ্বেদে উল্লেখিত উচ্চতর দেবতারা প্রায় সম্পূর্ণভাবেই বিভিন্ন মৌলিক উপাদান এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক বিষয়ের ব্যক্তিরূপ, যেমন অগ্নি ও বায়ু, সূর্য ও ঊষা। তবে প্রায়শই দেখা যায় বিভিন্ন লতাপাতার উপরেও কার্যকারিতা ও
সক্রিয়তার ধর্ম আরােপ করা হয়েছে, তাদের দেবতার স্তরে উন্নীত করা হয়েছে এবং সেভাবেই সম্বােধন করা হয়েছে। সােমলতা ছিল সবিশেষ শ্রদ্ধার বস্তু। সােমলতাকে গাঁজিয়ে প্রস্তুত করা তরলের পরমানন্দদায়ক প্রভাব সম্বন্ধে উচ্ছসিত ছিলেন বৈদিক উপাসকরা।[১] এমনকী সোমরসকে অমৃত বলেও মনে করা হত। গ্রিক ‘অ্যামব্রোসিয়া’-র সমতুল এই অমরত্বের পানীয়টি ,”এমন একটি উদ্দীপনাসঞ্চারী বস্তু যা দেবতাদের অমরত্ব প্রদান করেছে..এটি অসস্থ
ব্যক্তির ঔষধ এবং দেবতা সােম যে-কোনও অসুস্থ ব্যক্তিকেই সুস্থ করে তােলেন।” পরে আমরা দেখব যে সােমরস এবং তার গুণাবলির মধ্যেই নিহিত আছে হিন্দু কিমিয়াবিদ্যার ঊষাকাল।অন্য অনেক লতাপাতাকেও দৈব ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে অর্চনা কর।
হত। একটা গােটা সূক্তই নিবেদিত হয়েছে লতাপাতার (ঔষধির) প্রশংসায়,মূলত স্তুতি করা হয়েছে তাদের রােগনিরাময়কারী ক্ষমতার।[২]
অন্য একটি সূক্তে বলা হয়েছে : “হে রাজা বরুণ! এক শত এবং এক সহস্র ঔষধ আপনারই।”তবে রােগের চিকিৎসায় লতাপাতা এবং উদ্ভিদজাত দ্রব্যাদিকে সহায়ক উপাদান হিসেবে পূর্ণ স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে ‘অথর্ববেদ’-এ, যদিও সেগুলির
প্রয়ােগ সর্বদাই যুক্ত থেকেছে বিভিন্ন মন্ত্রতন্ত্রের সঙ্গে। যেমন অপমার্গ(achyranthes aspera) লতা, হিন্দু ঔষধ-পদ্ধতিতে যা এখনও মূত্রবর্ধক ও রেচক হিসাবে এক বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী, তাকে চিহ্নিত করা হয়েছে।“ঔষধসমূহের কর্তী” (iv, ১৭, ১) এবং “সমস্ত লতার একচ্ছত্র শাসক”হিসাবে। আর একটি সূত্রে সােমলতা সম্বন্ধে বলা হয়েছে : “এই অমৃতের (ambrosia) শক্তি আমরা এই মানুষটিকে দিচ্ছি পান
করার জন্য। অধিকন্তু আমি একটি ঔষধ প্রস্তুত করছি যাতে সে একশত বছর বেঁচে থাকতে পারে।” আরও বলা হচ্ছে, “ঔষধ প্রস্তুতের জন্য মানব চিকিৎসকরা যতরকম(লতাপাতা) জানেন, যাবতীয় নিরাময়কারী গুণসম্পন্ন ততরকম (লতা) আমি আপনার ক্ষেত্রে প্রয়ােগ করি।”[৩] গাঢ় রঙের লতার সাহায্যে কুষ্ঠ নিরাময় সংক্রান্ত একটি মন্ত্র এখানে দেওয়া হল :
রাতের অন্ধকারে জন্ম তােমার, হে লতা,
গাঢ়বৰ্ণ, কৃষ্ণবর্ণ তুমি;
গভীর আভামণ্ডিত তুমি, রঞ্জিত করাে এই কুষ্ঠকে,
মুছে দাও এর ধূসর যত দাগ। (I, ২৩, ১)
— ম্যাকডােনেল

Be the first to review “প্রাচীন ভারতের আয়ুর্ব্বেদ ও রসায়ন চিন্তা-আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়”