Description
তাপাহােস নদী যেখানে আমাজনে গিয়ে পড়ছে, আজ থেকে ৫০০ বছর আগে কার্ভাহাল যেখানে অসংখ্য মানুষকে পামগাছে পাতা দোলাতে দেখেছিলেন, সেই সান্তেরেমে, নদীর অপর পারে, উত্তর দিকে ছােট ছােট পাহাড় আছে। উনবিংশ শতকে বিজ্ঞানীরা সেখানে এসেছিলেন, তারা সে অঞ্চলের গাছপালা নিয়ে উৎসাহ দেখিয়েছিলেন। তার পর বিংশ শতকের শেষ দশকে এই পাহাড়ি অঞ্চলের একটা গুহা প্রত্নতত্ত্ববিদদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কাভের্না দে পিয়েদ্রা পিনতা বা চিত্রিত গুহা। চিত্রগুলি লাল, হলুদ ও বাদামী রঙের, একটা ছবির ওপর অনেক সময় আর একটি ছবি। (মধ্যপ্রদেশের ভীমবেটকার আদিম গুহাচিত্রের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে) তাতে
হাত, তারা, ব্যাং ও মানুষের ছবি রয়েছে। শুধু তাই নয়, গুহার মাঝখানে রয়েছে প্রাচীন আবর্জনার স্তুপ— প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে যা অনেক তথ্যের উৎস। আনা রুজভেল্ট নামের এক প্রত্নতত্ত্ববিদের নেতৃত্বে একটি দল এই আবর্জনাস্তূপটিকে স্তরে স্তরে পরীক্ষা করেন। তাতে সবচেয়ে নিচে সবচেয়ে পুরনাে যে স্তরটি তার বয়স ১৩ হাজার বছর। উত্তর আমেরিকার ক্লোভিস সংস্কৃতির সমসাময়িক। এরা অবশ্য বড় বড় পশু শিকার করত না। বড় বড় পশু পাবে কোথায়? তার বদলে ওরা জঙ্গল থেকে
ফল খেত, আর নদী থেকে মাছ। ২০০ কেজি ওজনের পিরারুকু মাছ (মিষ্টি জলের মাছের মধ্যে সবচেয়ে বড়) ছিল ওদের পছন্দের। ১২০০ বছর থাকার পর ওরা ঐ গুহা ছেড়ে চলে যায়।
ঐ গুহায় আবার ইতিহাসের পা পড়ে আজ থেকে ৮০০০ বছর আগে। এসময় হয়ত এটা ছিল সাময়িক আশ্রয়। বর্ষার জল যখন নদীর দুকূল ভাসিয়ে নিত তখন হয়ত মানুষ এখানে আশ্রয় নিত। সভ্যতা কিন্তু একধাপ এগিয়ে গেছে। এদের সঙ্গে ছিল মাটির পাত্র। লাল থেকে বাদামী রঙের। পুরাে আমেরিকায় মৃৎপাত্রের প্রথম
নিদর্শন। ৪ হাজার বছর আগে আমাজন উপত্যকার মানুষ চাষ শুরু করে দিয়েছে। তারা
অন্তত ১৩৮ রকম ফসলের চাষ করত। প্রধান ফসল হল ম্যানিওক। এ এক আশ্চর্য ফসল। যত খারাপ জমিই হােক, অসুবিধা নেই। পড়ে থাকলেও নষ্ট হয় না। সামান্য জমিতে অনেক লােকের খাদ্য উৎপাদন করা যায়। সার, পােকামাকড়ের ঝামেলা নেই।ওখানকার লােকে নানাভাবে খায় এই ম্যানিওক। পুড়িয়ে, ভেজে, সেঁকে, ভিজিয়ে,গেঁজিয়ে, গুঁড়াে করে।উৎপাদনের বিচারে ম্যানিওক আজ পৃথিবীর যষ্ঠ ফসল।উদ্ভিদবিদ চার্লস ক্লেমেন্টের মতে, পশ্চিম আমাজনও সভ্যতার এক আঁতুড়ঘর।১৯৯১ সালে কলম্বাসের আমেরিকায় পা দেওয়ার ৫০০ বছর পূর্তি হল। কিন্তু কলম্বাস আমেরিকার মাটিতে পা দেওয়ার আগে কেমন ছিল উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, তার সভ্যতা, তার গ্রাম-নগর,
সমাজ-সংস্কৃতি? সম্প্রতি প্রকাশিত বিভিন্ন গবেষণার ভিত্তিতে প্রচুর চিত্র সহকারে এই
বইতে কলম্বাস-পূর্ব আমেরিকার ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে। বিশ্বের প্রথম মমি,বিশ্বের সর্ববৃহৎ পিরামিড ও অসংখ্য নগর সৃষ্টিকারী অগণন
সভ্যতার কথা জানানাে হয়েছে পাঠকদের। এ নিয়ে বাংলায় এরকম বিশদে আলােচনা বিরল।
Be the first to review “কলম্বাস-পূর্ব আমেরিকা, মুছে দেওয়া সভ্যতার ইতিহাস -সুমিতা দাস”
You must be logged in to post a comment.