Description
নয় লক্ষ পাঁচ হাজার বর্গমাইলের বেশি কঙ্গো প্রজাতন্ত্র দেশে রয়েছে বিপুল সম্পদ।মাটি উর্বর। রয়েছে অনেক জল। তাছাড়া হীরে, ইউরেনিয়াম, সােনা, তামা, কোবাল্ট দস্তা, কোলটান আর তেল ও গ্যাস। কী নেই! কোলটান ব্যবহৃত হয় মােবাইল ফোনে ও ইলেক্ট্রনিক সামগ্রীতে। কফিও উৎপাদিত ও রপ্তানি হয়। পশ্চিম ইউরােপের সমআয়তনের এই দেশের সম্পদ এত বেশি যে, কঙ্গো হতে পারত বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ। নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার এক খবরে বলা হয়: কঙ্গোর হীরে শিল্প থেকে বছরে ৮৭ কোটি ডলার
আয় হয়। সেই শিল্প প্রায় ১০ লক্ষ মানুষকে কাজ দিয়েছে। কিন্তু জনপ্রতি দিনে আয় এক ডলারেরও কম। ভাবুন, কী নির্মম লােভ খনি মালিকদের!এই হীরে, ইউরেনিয়াম, সােনা, তেল ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদই যেন দেশজুড়ে
আয়ােজন করেছে মুনাফাবাজদের ‘খেলা”। সেই ‘খেলা’র নাম আজ আফ্রিকাজ ফাস্ট ওয়ার্ল্ড ওয়্যার, আফ্রিকার প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।আফ্রিকার ইতিহাসে বৃহত্তম যুদ্ধক্ষেত্রগুলাের অন্যতম হয়ে ওঠে কঙ্গো। এই বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদ ভান্ডার কঙ্গোতে যুগে যুগে ডেকে এনেছে দখলদার, সাম্রাজ্য বিস্তারকারী শক্তি, আধুনিক বেপারী, বহুজাতিক কোম্পানিকে। এদের সঙ্গে রয়েছে স্থানীয় দালালরা,মুৎসুদ্দিরা, যুদ্ধবাজরা। আর দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত সরকার। এরা সবাই মিলে দেশের জনসাধারণকে বিভক্ত করে। জাতিগত, গােত্রগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি করে। সেই
প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে পৌঁছে দেয় বিদ্বেষ আর সংঘাতের পর্যায়ে। দশকের পর দশক ধরে চলা
লুট, দুর্নীতি, হানাহানি, ষড়যন্ত্র দেশের অর্থনীতিকে করে ফেলে স্থবির, পঙ্গু।কঙ্গো ও তার আশপাশের নয়টি দেশ বসে আছে এই পৃথিবীর সব চেয়ে ধনসমৃদ্ধ অংশে। অথচ ধন লােভী সাম্রাজ্যবিস্তার, মুনাফা সন্ধানী কোম্পানির ষড়যন্ত্রের পরষড়যন্ত্রে, সংঘাতে দেশের আবাদ ধ্বংস হয়েছে। কার্যত থেমে গিয়েছে বাণিজ্য, খাদ্য,জল, স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষা ব্যবস্থা। নাগরিকদের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য গড়ে ওঠেনি অবকাঠামোে। গােটা দেশ হয়ে উঠল প্রতিদ্বন্দ্বী সশস্ত্র দল উপদলের রণক্ষেত্র।কখনও সরকারি বাহিনী আর বিদ্রোহীদের মধ্যে চলল লড়াই। একদিকে সরকারি বাহিনীকে সমর্থন করেছে অ্যাঙ্গোলা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে। আরও একদিকে বিদ্রোহীদের মদত দিয়েছে রুয়ান্ডা ও উগান্ডা। সব বিবাদের আড়ালে ছিল কঙ্গোর প্রাকৃতিক সম্পদ লুটে নিতে বহুজাতিক কোম্পানিগুলাের নৃশংস খেলা।২০০১-এ খােদ রাষ্ট্রসঙ্ঘ জানায়: সােনা, হীরে, গাছের কাঠ, কোলটান, লুট করার
উদ্দেশ্যে যুদ্ধরত পক্ষগুলাে ইচ্ছে করে সংঘাত দীর্ঘায়িত করেছে। এর আট বছর পরে ২০০৯ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘ নিয়ােজিত বিশেষজ্ঞদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়: বিদ্রোহীরা মানুষ হত্যা করছে ,লুট করছে প্রাকৃতিক সম্পদ। অথচ এরা রয়ে যাচ্ছে আইনের, বিচারের ধরাছোঁয়ার বাইরে।এই বিদ্রোহীদের মদত যোগাচ্ছে দুর্বৃত্তদের একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক বা জাল।এই জাল ছড়িয়ে আছে গোটা আফ্রিকাজুড়ে। সেখান থেকে পশ্চিম ইউরোপে ও উত্তর আমেরিকায়।সে জাল বোনে কারা?
Be the first to review “জ্বালানি তেলের পাহারাদার -মৃণালকান্তি দাস”
You must be logged in to post a comment.