Description
প্রাচীন ভারতের সভ্যতা ও সংস্কৃতি আধুনিক ঐতিহাসিকের প্রিয় গবেষণাক্ষেত্র। গ্রীস, রােম, মিশর প্রভৃতি মুষ্টিমেয় কয়েকটি দেশ ব্যতিরেকে আর কোনও জাতিই এত সমৃদ্ধ ও ঐশ্বর্যশালী ইতিহাস পায়নি। মানুষের আদিপর্বের প্রগতির কাহিনী অনেকাংশে ভারতেরই ইতিবৃত্ত মাত্র। ইতিহাসের ছাত্ররা তাই বারবার প্রাচীন ভারতে
ফিরে যান। সেখানে অনন্ত বিস্ময় তাদের জন্য অপেক্ষা করে থাকে।যাঁরা ইতিহাসের পেশাদার ছাত্র নন, তাদের জন্যও আদি ভারতের অনন্য আকর্ষণ। বিশেষত আধুনিক ভারতবাসীর
জন্য তাঁর পূর্বপুরুষ-বৃত্তান্ত খুব গুরুত্বপূর্ণ। আঠারাে-ঊনিশ শতকে পশ্চিমের হঠাৎ আলাের ঝলকানিতে আমাদের চোখ যে প্রথমটা ধাঁধিয়ে গিয়েছিল, তা অস্বীকার করা যাবে না। তারপর সেই পশ্চিমেরই কিছু পণ্ডিতের সহায়তায় এবং আমাদের স্বদেশবাসী কিছু বিদগ্ধ মনীষীর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় আমরা পুনশ্চ পূর্বজদের উপাখ্যানে আগ্রহী হলাম,অতীত আবার আবিষ্কৃত হল। সেই ফিরে দেখা, সেই নবদর্শন, সেই পুনরাবিষ্কার আমাদের আধুনিক ইতিহাসের
এক অবিভাজ্য অংশ। উন্নত প্রতীচ্যের মুখােমুখী দাঁড়িয়ে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার রসদ আমাদের জুগিয়েছিলেন আমাদেরই একদা-বিস্মৃত মহান ধীরােদাত্ত পূর্বগামীগণ।রেনেসাঁসের দিন গিয়েছে, স্বাধীনতা সংগ্রামের অধ্যায়ও আপাতত সমাপ্ত। কিন্তু জটিল, বহুধাবিদীর্ণ সমাজ তবুও বারবার তার আদিপর্বে ফিরে যেতে চায়। সেই প্রাচীন ইতিহাসে এখনও দুঃখে সান্ত্বনা মেলে, আনন্দে সমর্থন পাওয়া যায়। প্রাচীন পূর্বজেরা এখনও আমাদের দিকনির্দেশক, মুক্তিদাতা। ধর্মে, জ্ঞানে, কর্মে, সম্পদে, বৈরাগ্যে,ভােগে, ত্যাগে, জীবনের সকল যােজনাতেই তারা দীর্ঘতর রয়ে গেলেন।
শ্ৰীমনােরঞ্জন রায় প্রাচীন ভারতের সভ্যতাকে নতুন করে বিচার করতে চেয়েছেন। আলােচনার পরম্পরায় তিনি মাঝে মাঝে নেমে এসেছেন আধুনিকতর পর্বেও। পটভূমি বিশাল,বহুধাবিস্তৃত; স্থান-কাল-পাত্রপাত্রীর প্রসার মনকে অভিভূত করে দেয়। লেখক সেই অর্থে পেশাদার নন, কিন্তু তার ফলেই তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি অনেকাংশে নবীন, অনন্যপূর্ব।পরিচিত বিষয়েও তাঁর ভাষ্য বহুক্ষেত্রে নতুন, চিত্তাকর্ষক। ভাষা কোথাও দুরূহ, কিন্তু বােধ সর্বত্র প্রগাঢ়,গভীর ও শান্ত। লেখকের হাত ধরে আমরা এক প্রাচীন অরণ্যে প্রবেশ করি এবং দর্শনান্তে অরণ্যের বিশালতা ও পথনির্দেশকের প্রজ্ঞা, দুয়েতেই বিস্মিত বােধ করি।
Be the first to review “প্রাচীন ভারতের সমাজ সমীক্ষা,ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে -মনোরঞ্জন রায়”
You must be logged in to post a comment.