Description
‘বীণা পুস্তক রঞ্জিত হস্তে ভগবতী ভারতী দেবী নমস্তে’, এই সরস্বতীর স্তোত্রটা বাংলা ভাষাবিদ শুনলেই কপালে হাত ঠেকাবেন, চীনেম্যানের কাছে এটা ঠেকবেদুর্বোধ্য ! কথার মানে বুঝতে হলে ভাষা-শিক্ষার দরকার। ছবির মূর্তির ভাষা সর্বজনীন ভাষা-কাক বললে সবাই বুঝবে না কী বােঝাতে চাচ্ছি, কিন্তু সেটা এঁকে দেখালে জগৎসুদ্ধ লােক বুঝবে। আবার ছবি দেখাতে এবং ছবির রূপাক্ষর লেখা ভাষাজ্ঞানে অপরিপক্ক এমন অনেকে আছে যারা দেখেও বুঝবে না কী দেখিয়ে কী বােঝানাে হচ্ছে তাকে। এই শেষের ঘটনা পাঠকের বা শ্রোতার বা দর্শকের দোষে ঘটতে পারে কিংবা যে শিল্পী সে কাক লিখতে কাক রাজার নাতি লিখে বসে যদি! কথিত ভাষার
সঙ্গে চিত্রিত ভাষার পার্থক্য এই যে কথিত ভাষা সর্বজনীন নয়, চিত্রিত ভাষা সর্বজনীন। আব’ কথাটা শুনলে ফরাসিজাতি বােঝে ‘গাছ’, ঐ ‘আব’ কথা হিন্দুস্থানির কাছে মেঘরূপে দেখা দেয়, ইংরেজ অনেক তর্কাতর্কির পরে ঐ শব্দটাকে ‘আবার’ বা বাগান বলে বুঝবে। কিন্তু আঁকার ভাষা গাছকে গাছ, মেঘকে মেঘ,
কাননকে কাননরূপেই দেখায়। কথিত ভাষার কৃত্রিম উপায়ে একটা-একটা শব্দের সঙ্গে একটা-একটা অভিধা গায়ের জোরে চাপিয়ে দেয় না।
শব্দের সঙ্গে রূপকে ওভাবে জড়িয়ে-জড়িয়ে নিয়ে এল কথিত ভাষা।নবঘনশ্যাম—এই কথাটা রূপ ও রং দুটোরই উদ্রেক করলে ভাষাবেত্তার মনে।শব্দের সঙ্গে রূপ দিয়ে জড়িয়ে বাক্য হল উচ্চারিত ছবি। তেমনি চিত্র হল রূপ-রং
ভাব-ভঙ্গি ইত্যাদি নিয়ে চিত্রিত কথা। অভিনেতার ভাষা দু-তিন প্রকার ভাষা মিলিয়ে।সবাক ছবির ভাষা—বাক্যসমূহকে সুর-সার ভাব-ভঙ্গি রূপসজ্জা ইত্যাদি দিয়ে স্থানকাল-পাত্র ভেদে মঞ্চে পাঠিয়ে দেওয়া গেল নেপথ্য থেকে শিখিয়ে-পড়িয়ে। শুরু হল সুর-সার বাক্য দৃশ্যপটাদি নিয়ে যাত্রা। করিবর রাজহংস-গতি-গামিনী——চললিহু
সংকেত গেহা। কথিত ভাষা বা পঠিত কথা চলে সুর-সার ছন্দ ইত্যাদি ধরে। কাক বলে বসে থাকা চলে না। রূপকথা বলার বেলায় কাককে চলাতে হল বলাতে হল,তবে চলল খানিক কথামালার গল্পের মজলিস। কাজল কাকল পাখি শৃকাল চন্দ্রমুখী,মহারাজা ছাতা মাথায় বৈয়া রৈচে বেঙ’-—তিনজনে চুপচাপ বসে আছে এমন কালে—“ভিক্ষুক ব্রাহ্মণে ঠেকাইল চেঙ!’…এইভাবে কথাচিত্রে ক্রমে এগােতে থাকল কথামালার কাক, শৃগাল, ব্যাঙের ঘটনাবলী।
Be the first to review “বাঙালির ভাষা চিন্তা -সম্পাদনা:সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়”
You must be logged in to post a comment.