লোক-সাহিত্যে ছড়া -মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন কাসিমপুরী

Call / WhatsApp : +91 9563646472

To purchase / enquire about the book, send a WhatsApp message or call between 11 AM and 11 PM.

Description

লােক-সাহিত্যের বিষয়-বস্তুর মধ্যে বিবিধ ছড়া (বিশেষতঃ শিশু ও ছেলেমেয়ে বিষয়ক) প্রথম স্থানীয়। মানব সভ্যতার কোন স্তরে আসিয়া যে বিভিন্ন ছড়া রচিত হইয়াছিল, উহার সঠিক ইতিহাস কেহই দিতে পারেন না। তবে এ কথা সত্য যে ডাক, খনার বচন ও ছেলেমেয়ে বিষয়ক ছড়াগুলি অতি প্রাচীন; স্বপ্নদর্শী অচেতন মনের সরল স্বাভাবিক প্রকাশ, অকারণ আনন্দের সৃষ্টি এবং সমগ্র মানব গোষ্ঠীর লোক-সাহিত্যের বুনিয়াদ, শিশু সাহিত্যের রোমান্স।শিশু-মানবের সঙ্গে প্রকৃতির সম্বন্ধটা ছিল অতি নিবিড়, একান্ত স্নিগ্ধ-মধুর। এ সম্বন্ধ বাহিরের সম্বন্ধ নয় ; ইহা নিখিল সৃষ্টির অটুট নাড়ীর সন্বন্ধ ; অচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ। বর্তমান সভ্যতার যুগেও মানুষ এ সম্বন্ধ ভুলিতে পারে নাই। এখনও কোকিলার কুহুতানে, ময়ূরের কেকা- ধ্বনিতে, বর্ষার প্রারম্ভে ভেকের হর্ষোন্মাদনায় মানুষের প্রাণে দোলা জাগে। নিখিলের বিচিত্র রূপ-রস-শব্দ-গন্ধ- স্পর্শ তাহার মনের বনে জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে নীড় রচনা করিয়া, প্রতিবিম্বিত হইয়া, অন্তরের ও বাহিরের তাগিদে নানা ভাবে প্রকাশ পাইয়া আনন্দের উৎস ফুটাইয়া আসিতেছে। এই প্রকাশে ভাবের সামঞ্জস্য, সুস্পষ্টতা ও পরিণতি বিশেষ ছিল না ; ছিল কেবল দুর্লক্ষ্য আভাস-ইঙ্গিত, শব্দ-রূপের বৈচিত্র্য, শ্রুতি সুখাবহ ধ্বনি-ব্যঞ্জনা, ছন্দের মূর্ছনা আর কাব্যরসের অমিয় ধারা। ছড়ার রাজ্যে ‘বুদ্ধি ও বিচারের অধিকার নাই। শিশুদের কাছে বুদ্ধি ও বিচার অপেক্ষা রসের মূল্য বেশী—মস্তিষ্ক অপেক্ষা হৃদয় বড়’। ছড়াগুলি হৃদয় সঞ্জাত; কাজেই হৃদয় ভরিয়া হৃদয়ের সৃষ্টি শিশুরা গ্রহণ করিতে দ্বিধাবোধ করে না। “That which comes from the heart goes to the heart.”
গিরি-কন্দরের ঘুমন্ত নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গের পর সে যেমন চারিপাশের জল রাশি লইয়া পরিপুষ্ট হইয়া, শত শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হইয়া স্বচ্ছন্দ-সাবলীল গতিতে চলিয়া যায়, অন্তরের পথে, এই ছড়াগুলিও তেমনি আদি কালের মানব-মানবীর হৃদয়-কন্দর হইতে বহির্গত হইরা আগত ও অনাগত শিশু-রাজ্যে ছুটিয়া চলিয়াছে। এগুলি চির সুন্দর, চির নূতন ও চির পুরাতন। আদি কালের বাসস্তী পূর্ণিমার চাঁদে আর বর্তমান বাসন্তী পূর্ণিমার চাঁদে কোন পার্থক্য নাই ; ‘নিতুই নব’। ছড়া গুলির চিরত্ব ও নূতনত্ব সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথ বলিয়াছেন :
এই সকল ছড়ার মধ্যে একটি চিরত্ব আছে। কোনোটির কোনো কালে কোনো রচয়িতা ছিল বলিয়া পরিচয় মাত্র নাই এবং কোন সনের কোন তারিখে কোনটা রচিত হইয়াছিল, এমন প্রশ্ন ও কাহারও মনে উদয় হয় না। এই স্বাভাবিক চিরত্ব গুণে ইহা আজ রচিত হইলেও পুরাতন এবং সহস্র বৎসর পূর্বে রচিত হ‌ইলেও নতুন।

Be the first to review “লোক-সাহিত্যে ছড়া -মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন কাসিমপুরী”