Description
আশালতা সেন (১৮৯৪-১৯৮৬)-এর জীবন
ইতিহাস ‘আত্মকর্তৃত্বে সুপ্রতিষ্ঠিত এক পরিপূর্ণ মানুষের ইতিহাস’। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে বিদেশি বর্জন ও স্বদেশি ভাবধারার সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে যে বালিকা ত্যাগ ও আদর্শবাদের মন্ত্রে দীক্ষা পেয়েছিল, গান্ধীজি, অসহযােগ, চরকাখদ্দর, ঢাকার ‘গেন্ডারিয়া মহিলা সমিতি’,
‘কল্যাণ কুটির’, আইন অমান্য আন্দোলন,১৯৪৩-এর দুর্ভিক্ষ-পীড়িতদের সেবা তাকে পরিণত করে তুলেছিল। এই সবকিছুর সঙ্গে ছিল তাঁর কাব্যরচনা, যা আশালতার সদাব্যস্ত জীবনে পূর্ণতা ও স্থিতি এনে দিয়েছিল।স্বাধীনতা-সংগ্রামী, সমাজসেবী ও সুসাহিত্যিক আশালতা সেনকে তাঁর জন্মশতবর্ষে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে এই সংকলন প্রকাশ করা হল। এর প্রথম অংশে
আছে আশালতা সম্পর্কে একগুচ্ছ লেখা—
তাঁর জীবনসংগ্রামের টুকরাে স্মৃতি থেকে
সাহিত্যসৃষ্টির মূল্যায়ন। দ্বিতীয় অংশে নারী
আন্দোলন এবং সেকালের মেয়েদের বিষয়ে
তার দুটি দুষ্প্রাপ্য লেখা ‘জয়শ্রী’ পত্রিকা থেকে পুনর্মুদ্রিত হয়েছে। শেষে আছে তাঁর রচিত গ্রন্থের একটি পঞ্জী।সুলেখিকা আশালতার (যাঁর প্রথম কবিতা ছাপা হয় ন’বছর বয়সে) পেছনে ছিলেন আর এক সরস লেখিকা। আশালতার মা মনােদা দেবীর আত্মজীবনী পুনর্মুদ্রিত হয় ‘এক্ষণ’ পত্রিকায় ১৩৮৯ সালে। জনৈকা গৃহবধূর ডায়েরী’ নামে এই লেখাটি প্রথম ছাপা হয় ১৩৬১ সালে ‘মাসিক বসুমতী’র সাতটি সংখ্যায়, সৈয়দ মুজতবা আলীর মুখবন্ধ সহ। মুজতবা আলির ভাষায় : ‘আমার ব্যক্তিগত দৃঢ় বিশ্বাস,দিদিমণির লেখা মণিময় লেখা। এই লেখার ঐশ্বর্য কিন্তু মানববিদ্যাচর্চার ক্ষেত্রে একটু ভিন্নভাবে প্রতিভাত। আশালতা সেনের দীর্ঘ জীবনের বৈচিত্র্যময় ঘটনা সমাবেশে যে আত্মপ্রত্যয়ের এবং মমতার সুরটি বাজতে থাকে তার ভিত তৈরি
হয়েছিল কিন্তু মনােদা দেবীর জীবনে, সেখানে বারাে বছর বয়সের একটি মেয়ের শিক্ষার স্বাধীনতা এবং উচ্চবিত্ত জীবনের গাৰ্হস্থ্যের শৃঙ্খলা দুইই কাজ করেছে যুগলবন্দীতে। ইদানিংকার যে’কজন বিখ্যাত মহিলার আত্মজীবনীর সঙ্গে আমাদের পরিচিতি ঘটেছে তার মধ্য দিয়ে আধুনিক ভারতবর্ষের শ্রেণীবিবর্তনের চেহারাটি ফুটে ওঠে। ১৮৪৯ সালে বিদ্যাসাগর ও অন্যান্য সমাজ সংস্কারকদের প্রচেষ্টায় বেথুন স্কুলের গােড়াপত্তন হওয়ার পর থেকে শৈশবের বাধাগুলি ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠে স্ত্রী-শিক্ষা আমাদের সমাজে পাকাপাকিভাবে ভিত গড়ে বসে। এইটি যে আমাদের শ্রেণীবিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দু, তা আমরা খানিকটা প্রত্যক্ষ করতে পারি মনােদা দেবী ও আশালতার পরম্পরার মাধ্যমে।বিক্রমপুরের ইতিহাসও লেখা হয়েছে, জাতীয় জীবনে আলাদা আলাদা গ্রামের
ভূমিকাও লেখা হয়েছে (যেমন আমাদের গ্রাম ‘আউটসাহীর ইতিবৃত্ত এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে গ্রামের অবদান, কলকাতা, ১৩৭১)। কিন্তু এ বিষয়ে কোনাে সন্দেহ নেই যে ঔপনিবেশিক পর্যায়ে বিক্রমপুরের সামাজিক ইতিহাস সম্পূর্ণ হবে না, যদি না মনােদা দেবীর এই আত্মজীবনীটি পড়া হয়। শিক্ষা ও গার্হস্থ্য—যে
দুই ভিন্নমুখী টানাপােড়েনের মধ্যে সেকালের শিশুকন্যাদের সামাজিকীকরণের কাজটি সমাধা হোত,বিক্রমপুরের বৈদ্য উচ্চবিত্ত পরিবারের শিশুকন্যার জীবনকাহিনী তে তার প্রায় একটি রোজনামচা বিধিবদ্ধ রয়েছে ।জীবনের দৈনন্দিন খুঁটিনাটি,বিশেষ করে স্নেহের সম্পর্কগুলি,প্রিয়- জনবিয়োগ জন্ম-মৃত্য,বিবাহ -এগুলি প্রায়শই ধরা পড়ে উনিশ শতকের শেষভাগে মহিলাদের এই অসাধারণ আত্মজীবনী গুলিতে।মননএবং হৃদয়বত্তার যে সংমিশ্রণটি আমাদের সমাজের প্রসারের মূল মতাদর্শ তার একটি বিশেষ চেহারা ফুটে ওঠে মনোদা দেবীরস্মৃতিচারণে।
Be the first to review “শতবর্ষে আশালতা সেন -সম্পাদক:অভিজিৎ সেন যশোধরা বাগচী”
You must be logged in to post a comment.