উপনিষৎ-প্রসঙ্গ প্রথম খন্ড -অনির্বাণ

Call / WhatsApp : +91 9563646472

To purchase / enquire about the book, send a WhatsApp message or call between 11 AM and 11 PM.

Description

আজপর্যন্ত প্রায় দু’শ’র বেশী উপনিষদের সন্ধান পাওয়া গেছে।তবে কিনা তাদের অধিকাংশই অর্বাচীন। বেদের আরণ্যকের সঙ্গে সাক্ষাৎভাবে যুক্ত উপনিষদ হল এই কয়খানি—ঐতরেয়
কৌষীতকি ছান্দোগ্য কেন তৈত্তিরীয় এবং বৃহদারণ্যক। মহানারায়ণ বা যাজ্ঞিকী উপনিষদ তৈত্তিরীয়ারণ্যকের অন্তর্ভুক্ত হলেও প্রাচীন কাল হতেই এটিকে খিল বলে ধরা হয়েছে। সুতরাং
তাকে বাদ দিয়ে ঐতরেয় প্রভৃতি ছয়টি উপনিষদই ভাষা ও বাগভঙ্গির বিচারে সর্বপ্রাচীন বলে গণ্য হতে পারে। এ-কয়খানিই ব্রাহ্মণের মত গদ্যে রচিত, কেবল কেনোপনিষদের প্রথম দুটি খণ্ড পদ্যে। পণ্ডিতেরা অনুমান করেন, এসবই বুদ্ধপূর্ব যুগের রচনা।শ্রীমৎ অনির্বাণ একাধারে কবি ও মনীষী। বুদ্ধি ও বােধির এক অতি দুর্লভ আশ্চর্য সমন্বয় ঘটেছে তার মধ্যে। বােধির স্বচ্ছ আলােকে তিনি বেদবাণীর যে অখণ্ড রূপটি দেখেছেন তাকেই আবার তাঁর বৈশারদী বুদ্ধি যুক্তি ও প্রমাণ সহযােগে আমাদের কাছে গ্রাহ্য করাবার অতন্দ্র প্রয়াসে ব্যাপৃত। সে-যুক্তি ও প্রমাণ সকলের কাছে গ্রাহ্য না-ও হতে পারে।অনেকে বেদের উপর একে নিছক আধ্যাত্মিকতার আরােপ বলে উপহাসও
করতে পারেন। কিন্তু তার অনুভব ও বিচার দুই-ই এক সুরে বলে যে বেদ ও উপনিষদ একই অবিচ্ছিন্ন ভাবধারা। এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশী প্রত্যয় বা বিশ্বাস এনে দেয় ঈশােপনিষদের মন্ত্র গুচ্ছ। বেদ প্রধানত কর্মমূলক ও উপনিষদ জ্ঞানমূলক—এই আমাদের প্রচলিত ধারণা এবং আমরা আরও মনে করি কর্ম ও জ্ঞানের মধ্যে পর্বতের মত অকম্প্য, অটল বিরােধ। কিন্তু
এই উপনিষদে আমরা শুনি ভিন্ন সুর–কর্ম ও জ্ঞানের ‘সাহিত্য বা সমন্বয়ের বাণী।এই সমন্বয়কে সুদৃঢ় ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করেছেন শ্রীমৎ অনির্বাণ তাঁরব্যাখ্যায়। এই ব্যাখ্যার অভিনবত্ব এইখানে যে তিনি ঈশােপনিষদের পূর্ববর্তী‌বেদ এবং সমসাময়িক প্রাচীন উপনিষদগুলির মধ্যেই তার প্রমাণগুচ্ছকে নিবদ্ধ রেখেছেন। পরবর্তী কালের কোনাে দার্শনিক চিন্তাধারার পরিভাষা দিয়ে বা ঈশােপনিষদের পরবর্তী কোনাে গ্রন্থের প্রমাণ দিয়ে আপন বক্তব্যকে স্থাপন করবার প্রয়াস করেননি। অগ্রজাত বৈদিক ভাবনার সঙ্গে সুনিবদ্ধ হলেই যে এই উপনিষদের মর্মগ্রহণ সুখসাধ্য হয় তা তিনি প্রমাণিত করেছেন
‘বিদ্যা-অবিদ্যা’, ‘সস্তৃতি-অসভৃতি’ প্রভৃতি দুর্বোধ্য তত্ত্বগুলির ব্যাখ্যায়। পূর্ববর্তী সব আচার্য এবং ব্যাখ্যাতৃগণের প্রতি অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা রেখেও দ্বিধাহীনচিত্তে বলা যায় যে ঈশােপনিষদের ঐ সব শব্দগুলির কোনাে ব্যাখ্যাই আজ পর্যন্ত ‘হৃদয়-
সংশয়ােচ্ছেদী’ হয়নি। সংশয় আরও গভীরতর হয় যখন উপনিষদগুলির মধ্যেই দেখি পরস্পরবিরােধী সুর-যেমন, এই বিদ্যা-অবিদ্যা সম্বন্ধে কঠোপনিষদে সুস্পষ্ট বিরােধের ও বৈপরীত্যের ঘােষণা :
দূরমেতে বিপরীতে বিষূ চী
অবিদ্যা যা চ বিদ্যেতি জ্ঞেয়া।।
এবং অবিদ্যার প্রলােভন ত্যাগ করে শুধু বিদ্যাকেই বরণ করায় যম অভিনন্দিত করলেন নচিকেতাকে। অথচ এখানে ঈশােপনিষদে বিদ্যা-অবিদ্যার সমন্বয় সাধনের ওপরই সবচেয়ে বেশী জোর দেওয়া হয়েছে। সুতরাং নিঃসন্দেহে বলা
চলে যে কঠোপনিষদ যে-অর্থে বিদ্যা-অবিদ্যাকে গ্রহণ করেছেন ঈশােপনিষদে তা’ করা হয়নি। এখানে শব্দ দু’টির তাৎপর্য ভিন্নতর।

Be the first to review “উপনিষৎ-প্রসঙ্গ প্রথম খন্ড -অনির্বাণ”