Description
বইটি সুভাষ বসু নামক একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বিপ্লবী নায়ক বা ব্যক্তি মানুষের নিছক
জীবন চরিত বা তার সমসাময়িককালের ইতিহাস নয়। এ বইয়ের মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে সুভাষ
বসুর রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চিন্তাধারা আলােচনা-পর্যালােচনা করা। তবে সমসাময়িক
কালের ঘটনাপ্রবাহ বা তৎকালীন রাজনৈতিক ব্যক্তি বা কর্মতৎপর নায়ক-নায়কদের বাদ
দিয়ে সুভাষের রণনীতি ও কূটনীতির যথার্থ মূল্যায়ন হতে পারে না। বইটিকে আমি দেখছি।
প্রধানত একটি রণনৈতিক-কৌশলগত বিষয়কেন্দ্রিক লেখা হিসেবে। এ গ্রন্থের লেখামূলে
আমার অনুভূতি হলাে আমরা আমাদের পারিপার্শ্বিক ব্যক্তিত্ব ও ঐতিহ্যের যথাযথ মূল্যায়নে সক্ষম হইনি। বরং অনেক ক্ষেত্রে আমরা এসবের অবমূল্যায়ন করে থাকি, এমনকি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতেও দ্বিধাগ্রস্ত হই না। “ভারতবর্ষের রাজনৈতিক জীবনের আচার-আচরণে এমন কোনাে মহিমান্বিত রাজনৈতিক ধারণার উন্মেষ ঘটে নি যার সৃষ্টিমূলে ছিল না বিদেশী এবং একমাত্র বিদেশীরা ছাড়া অন্য কেউ কখনাে এদেশে স্থিতিশীল রাজনৈতিক ব্যবস্থার সৃষ্টি ও কায়েম করতে সক্ষম হয় নি।”
| উপযুক্ত বক্তব্য প্রদান করেন নীরােদ চন্দ্র চৌধুরী (Chaudhuri, 1951 : 490)। নীরােদ
চৌধুরীর সামান্যই পরিচয়ের প্রয়ােজন, কেননা তিনি হচ্ছেন এক অসামান্য বাঙালি পণ্ডিত।
১৯৩০-৩৪ দশকের দিকে তিনি সুভাষ বসুর খ্যাতিমান জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা শরৎ চন্দ্র বসুর
সেক্রেটারি হিসেবে বসু পরিবারের কাজে নিয়ােজিত ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে পরলােকগত এই বর্ষীয়ান পণ্ডিতের উপযুক্ত বক্তব্যের যথার্থতা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। নীরােদ
চৌধুরী জ্ঞানবান সত্য। ইংল্যান্ডে তিনি বহু বছর বসবাস করেন। বয়স তার শতবর্ষের ওপরে। মারা যান ২০০১ সালে। তার জ্ঞানগর্ভ লেখা পাণ্ডিত্য এবং সম্ভবত ব্রিটিশদের মহিমার প্রতি তার প্রগাঢ় আনুগত্যের কারণে এই বর্ষীয়ান পণ্ডিত ব্রিটিশ রানীর প্রদত্ত খেতাবও লাভ করেছেন। নীরােদ চৌধুরীর খ্যাতি তার ভাষা ও সাহিত্য রীতির জন্য। স্বদেশ,বাংলা ও ভারত এই উপমহাদেশের পারিপার্শ্বিকতা নিয়ে লেখালেখিতে তিনি রমরমা বটে; এ অহং-সর্বস্ব মনমানসিকতা ধরা দেয় তার লেখায়। তাঁর লেখা স্বকীয়তা ও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিতও
বটে; স্বদেশের মানুষ, সমাজ ও ব্যবস্থা সম্পর্কে তার লেখালেখি যে বেশ উপভােগ্যও এতে
সন্দেহের কোনাে অবকাশ নেই। কিন্তু তার ভিন্নরূপ খ্যাতিও রয়েছে। তার আত্মশ্লাঘাবােধ
এত প্রবল যে, তার অনেক বক্তব্য উদ্ভট বলেও প্রতীয়মান হয়, তার নিজ সম্পর্কে ও তার
বৈশ্বিক ধারণা সম্পর্কে তার মধ্যে রয়েছে অতিশয় আত্মগর্ববােধ। এমনকি অন্যদের নিয়ে
ব্যঙ্গ-উপহাস করেও যেন তিনি পরম তৃপ্তি লাভ করেন।
Be the first to review “সুভাষ বসুর রণনীতি ও কূটনীতি -আবুল কালাম”
You must be logged in to post a comment.