Description
জল এগােচ্ছে, মানুষ পিছোচ্ছে! সুন্দরবনের ঘােড়ামারা দ্বীপে এ ভাবেই বৃত্তটা ছােট হচ্ছে রােজ। ধান আর পান। দুইয়ের জন্য খ্যাতি আছে এই দ্বীপের।’দুধের সর চাল ও মিঠে পাতি পানের জন্য গােটা সুন্দরবনে এই দ্বীপের নাম ডাক’, বেশ গর্কে সঙ্গে বললেন বছর তিপ্পান্নর অজয় পাত্র। নিজে দশ বছর এই ঘােড়ামারা দ্বীপের গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ছিলেন। অজয়ের কথায়, ‘গোলাভরা ধান, গােয়াল ভরা গরু নিয়ে আমাদের দ্বীপ বেশ সম্পন্ন ছিল। সে সব দিন চোখের সামনে ফুরিয়ে আসছে। আর কত দিন? তারপর লােহাচরার দশাই হবে।’ঘােড়ামারার দক্ষিণে ছিল লােহাচরা। নদী গিলে খেয়েছে। একটু একটু করে পুরা দ্বীপটা জলের তলায় চলে গিয়েছে। এখন কাকদ্বীপের ৮ নম্বর লটের ৪ নম্বর ঘাট থেকে লঞ্চে করে সাগরদ্বীপ যাওয়া-আসার পথে অনেকেই সাগর আর ঘােড়ামারার মাঝে বিস্তীর্ণ জলের দিকে হাত দেখিয়ে বলে ওঠেন, ‘ওই যে, ওই—ওইখানটায় আমাদের ঘর ছিল।’
লােহাচরার নিয়তি ডাকছে ঘােড়ামারাকে। হা হা করে ছুটে আসছে জল। সাফ হয়ে গিয়েছে ঘােড়ামারার নব্বই ভাগ। অজয় বললেন, ‘ভূমি দফতরের রেকর্ড বলছে, দ্বীপের আয়তন ছিল ২৯ হাজার বিঘে। এখন দাড়িয়েছে ৩ হাজার বিঘেতে।’ বছরভর পাড় ভাঙছে। বর্ষার তিন মাস তাে বাঁধ ভেঙে জল ঢুকে পড়ে দ্বীপের মধ্যিখানে। আগে ঢুকে পড়া জল স্লুইস গেট দিয়ে বার করে দেওয়া হতাে। স্লুইস গেট ছিল মাইতিপাড়ায়, চুনপুড়িতে। বছর কয়েক আগে জলের তােড়ে স্লুইস গেটই ভেঙে গিয়েছে। এখন জল বার করা যায় না। গিরিপাড়া, রায়পাড়া, বৈষ্ণবপাড়া, পাত্রপাড়া, খাসিমারার বেশির ভাগটা জলের তলায়।চুনপুড়ির পূর্বপাড়া, হাটখােলা জলের তলায় গেল বলে!
Be the first to review “নদী - বাংলার কথা - কাহিনি -সুকান্ত সরকার”
You must be logged in to post a comment.