বীরভূম জেলার স্থানিক ইতিহাস সম্পাদনাঃশ্যামচাঁদ বাগদী

Call / WhatsApp : +91 9563646472

To purchase / enquire about the book, send a WhatsApp message or call between 11 AM and 11 PM.

Description

এই বইটিতে আছে বীরভূম কীভাবে বহ জাতি ও সম্প্রদায়ের আবাসস্থল হয়ে উঠল; প্রাচীনকালে কারা এখানে রাজত্ব করতেন।কোন জাতির আধিক্য ছিল, বৌদ্ধ-জৈন ধর্মের বিস্তার ও রূপান্তর কীভাবে ঘটেছিল; উপজাতির বিভিন্ন আন্দোলন, দেশপ্রেম, শোষণ ও বঞ্চনা় বিদ্রোহ, ভৌগােলিক অবস্থান, নামকরণ, মঠ-মন্দির-মসজিদের নানা প্রত্নতাত্ত্বিক বিচারও এই ব‌ই তে আছে।বীরভূম নামকরণের নানা মত ও তর্কের জটিলতা থেকে এখানে সঠিক প্রমাণ সাপেক্ষে সব তথ্যের অবতারণা আছে। ধর্মসংস্কৃতি, আচার ও রাজনৈতিক নিয়মনীতির প্রেক্ষিতে সভ্যতার উত্থান, ধ্বংস কীভাবে ঘটেছে সেসব ক্ষেত্রে খুব যত্নশীল হয়েছেন এই ব‌ইয়ের লেখক। প্রাচীন জনজীবনের সঠিক তথ্য,নানা কিংবদন্তির কথাও এখানে বর্নিত হয়েছে, যেগুলো মানবসমাজে প্রচলিত আছে আজও। বীরভূম, মাড়গ্রাম বা মারগ্রাম, মাসড়ার ব্রজ-দুর্গা বাঁধ, বারাগ্রামের দেবীমূর্তি, জমিদারের কথা, খ্রিস্টান মিশনারি সাহেবদের মিশন স্থাপন, বীরভূমে বৌদ্ধ ও জৈন তীর্থঙ্করদের ভ্রমণ বৃত্তান্ত স্হান পেয়েছে এই ব‌ইতে।বীরভূমে বৌদ্ধ ধর্মের বিজ্ঞানী সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটেছিল বলে অনুমিত হয়। এদেশের মাটির নাম বজজভূমি বা বজ্রভূমি। বজ্রকঠিন মাটির জন্যই এই নাম হওয়া সম্ভব। বজ্রযানি বৌদ্ধ দেবদেবীর বহু মূর্তি এখানকার অনেক স্থান থেকে আবিষ্কৃত হয়েছে।বজ্রযানিদের কল্পনায় আদি বুদ্ধকে বজ্রধর বলা হয়। তাঁর শক্তি হলেন প্রজ্ঞাপারমিতা বলাই বাহুল্য যে, লােহাপুর সংলগ্ন বারা গ্রামে বহু বৌদ্ধ মূর্তি পাওয়া গিয়েছে। তার মধ্যে প্রজ্ঞাপারমিতার একাধিক মূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে। যদিও তার মধ্যে চুরিও হয়ে গেছে কিছু মূর্তি, তবুও কোলকাতার যাদুঘরের আশুতােষ হলে এখনাে বারায় পাওয়া মূর্তি প্রদর্শিত হচ্ছে। বজ্রযান বৌদ্ধ ধর্মের উপর অনার্য সম্প্রদায়ের গভীর ছাপ আছে। বজ্রযান মণ্ডলের দেবীগণের নাম থেকে এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হয় না যে বীরভূমের আদি বাসিন্দা অনার্য জাতিদের বিভিন্ন নাম থেকেই সব দেবীদের নামকরণ করা হয়েছিল। বুদ্ধদেব যে বীরভূমে এসেছিলেন তার উল্লেখ বৌদ্ধ গ্রন্থ ‘দিব্যাবদান গ্রন্থ থেকেই জানা যায়, গৌতমবুদ্ধ বীরভূম অতিক্রম করে পুন্ড্রবর্ধন পর্যন্ত গিয়েছিলেন। হিউয়েন সাং তাঁর “ভ্রমণ বৃত্তান্তে’ উল্লেখ করেছেন যে, তিনি বীরভূমে বহু বৌদ্ধ বিহার দেখেছিলেন। মুসলমান আক্রমণের পূর্ব পর্যন্ত এইসব বিহারের অস্তিত্ব ছিল বলে ঐতিহাসিক ডঃ অতুল সুরের মত। বখতিয়ার খিলজি লক্ষ্মর (রাজনগর) আক্রমণ করতে রাজমহলের পথ‌ দিয়ে বীরভূমে প্রবেশ করেছিলেন। সেই আক্রমণের সময় বখতিয়ার খিলজীর সহসেনারা বেীদ্ধদের মঠ ও বিহারগুলি ধ্বংস করলে বৌদ্ধরা নেপাল, তিব্বত ও চট্টগ্রামে পালিয়ে যায় এবং তখন থেকেই বীরভূমের সঙ্গে বৌদ্ধদের ও বৌদ্ধ ধর্মের বিচ্ছেদ ঘটে। (অবশ্য এবিষয়ে অন্য মত হলাে: কর্ণসুবর্ণের রাজা শশাংক ছিলেন বৌদ্ধ ধর্ম বিদ্বেষী – তিনি তাঁর অনুচরবর্গের সহায়তায় বহু বৌদ্ধ মঠ ইত্যাদি ভেঙে দেন। বলা বাহুল্য যে শশাংকের রাজ্যসীমা ছিলাে মুর্শিদাবাদ থেকে রাজমহল পর্যন্ত। এর মধ্যে বীরভূমের বহু অংশ পড়ে) কিন্তু ঐ আক্রমণের ফলে সকলেই যে পালাতে পেরেছিলেন এমন মনে করার কারণ নেই। বৌদ্ধ শ্রমণেরা পালাতে সক্ষম হলেও সাধারণ শ্রেণীর বৌদ্ধ ধর্মের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা ইতস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে এই বীরভূমেই থেকে যান এবং হিন্দুদের সঙ্গে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সেই সময় ব্রাহ্মণ্যবাদ অত্যন্ত প্রবল ও ছুতমার্গীতায় কঠোর ছিল। বৌদ্ধধর্মের শেষ পর্যায়ে যখন ঐ ধর্মে স্বেচ্ছাচারিতা চরমে পৌছায় এবং সঠিক নেতৃত্বের অভাবে দিশেহার হয়ে পড়ে তখন হিন্দু ধর্মের ছত্রছায়ায় এদের ঠাঁই হয়নি।

Be the first to review “বীরভূম জেলার স্থানিক ইতিহাস সম্পাদনাঃশ্যামচাঁদ বাগদী”